কুমিল্লায় সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট অচল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্কতা জোরদার হলেও কুমিল্লায় যেন তার বিপরীত চিত্র। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান—কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট এবং আইসিইউ বিভাগ এখন কার্যত অচল। রোগী বাড়ার শঙ্কার মধ্যেই এই বিপর্যস্ত অবস্থাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ বাড়ছে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের মধ্যে।
২০২০ সালের জুনে ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেনডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় এই দুই হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছিল পৃথক আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিট। কিন্তু প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর তা সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জনবল না থাকায় এই ইউনিটগুলো এখন কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে স্থাপন করা ৩০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র দুইটিতে বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বাকিগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে। একই অবস্থা কুমেকেও। সেখানে ৩০টির মধ্যে মাত্র ১০টি বেড সচল রয়েছে। শত কোটি টাকার মূল্যমানের আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো অব্যবহৃত পড়ে থাকায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে জনবল সংকটও প্রকট হয়ে উঠেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। একজন চিকিৎসক এবং মাত্র চারজন নার্স দিয়ে এখন কোনোভাবে চলছে একটি ইউনিটের কার্যক্রম। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড আইসিইউ ইউনিটের ইনচার্জ আবদুল মুকতাদির জানান, প্রকল্প শেষ হওয়ায় রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, এই অব্যবস্থাপনা শুধু করোনা রোগীদের জন্য নয়, বরং অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্যও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে আইসিইউতে একদিন চিকিৎসা নিতে খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৯০ হাজার টাকা, সেখানে জেনারেল হাসপাতালের ব্যয় মাত্র সাড়ে ৬০০ টাকা। অথচ সেই সুবিধা থেকেও এখন বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে কর্মরত জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাইন উদ্দিন মিয়াজী বলেন, আমরা যারা এখনো কাজ করছি, তারা দায়িত্ববোধ থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না এলে খুব বেশি দিন আর এইভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। আমরা চাই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে পুনরায় জনবল নিয়োগ দেওয়া হোক। করোনাকালে যে ত্যাগ করেছি, তার যেন স্বীকৃতি অন্তত থাকে।
একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরঞ্জাম, অবকাঠামো সবই আছে, শুধু ব্যবহারের অভাবে সব নষ্ট হচ্ছে। এই সম্পদ যেন মানুষকে বাঁচাতে ব্যবহৃত হয়, সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
এদিকে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির জানান, প্রকল্প শেষ হওয়ায় সৃষ্ট জটিলতার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় অবগত রয়েছে। জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পুরোপুরি চালু করতে অন্তত ১৫ জন নতুন জনবল প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, করোনা পরীক্ষার কিটের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং নতুন করে কিছু শ্রেণির রোগীদের জন্য টিকা সরবরাহের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জনগণের জীবন রক্ষায় সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে শুধু একটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় পুরো জেলার স্বাস্থ্যসেবার ভীত নড়বড়ে হয়ে পড়বে—এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
(ঢাকা টাইমস/১৬জুন/এসএ)

মন্তব্য করুন