রেজাউল করিম মল্লিকের পর
আরেকজন ফ্যাসিস্ট বিরোধী অফিসার পেল ডিবি: ইলিয়াসের পোস্ট

প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন বলেছেন— ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আরেকজন ফ্যাসিস্ট বিরোধী অফিসার পেল। তিনি হলেন ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।
বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম— ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইলিয়াস এ মন্তব্য করেন।
ডিবি প্রধানের পদটি প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে শূন্য ছিল। যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ডিবির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের ভার সামলাচ্ছিলেন। শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের শূন্যতা পূরণ হলো।
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন লিখেছেন, 'মেধাবী হবার পরেও আওয়ামী লীগের ১৫ বছর শফিকুল ইসলাম ছিলেন বঞ্চিত; কঠিন এক সময় পার করতে হয়েছে তাকে৷ গুম-খুন করতে না পারায় পদোন্নতিও আটকে ছিল৷ জুলাই বিপ্লব তার প্রাপ্য ফিরিয়ে দিয়েছে, আশা করি ভালো কিছু হবে৷ নতুন ডিবি প্রধানকে অভিনন্দন৷'
গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি শফিকুল ইসলামকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার পদে পদায়ন করা হয়। পরবর্তীতে বুধবার তাকে ডিবিপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। একইদিন তিনি ডিবিপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এদিকে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১ সেপ্টেম্বর ডিবিপ্রধান হন দীর্ঘদিন পদবঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল করিম মল্লিক। ডিএমপিতে পদায়নের আগে মল্লিক সিআইডির ডিআইজি ছিলেন। হাসিনার পতনের পর তিনি পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি হন এবং সিআইডি সদরদপ্তরে বদলি হন।
রেজাউল করিম মল্লিক ১৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৮ সালে পুলিশে যোগদান করেন। কর্মজীবনে তাকে পুলিশের কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতে চাকরি করতে হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল কোনো কারণ ছাড়াই রেজাউল করিম মল্লিককে ডিবি থেকে সরিয়ে ডিএমপি সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। যা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তাকে স্বপদে বসাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলতে থাকে নানান ইতিবাচক পোস্ট। পরে সরকার ৭ মে মল্লিককে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে পদায়ন করে। ডিবির পাশাপাশি ঢাকা রেঞ্জেও তিনি কর্মদক্ষতা দেখিয়ে চলছেন।
কে এই শফিকুল ইসলাম?
ডিবিপ্রধানের দায়িত্ব পেতে যাওয়া শফিকুল ইসলামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি লক্ষ্মীপুরে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে বদলি হয়ে প্রায় পাঁচ বছর কাজ করেন।
পরে সারদা পুলিশ একাডেমিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রেনিং) হিসেবে যোগ দেন। ২০০৭ সালের জুনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে লাইবেরিয়ায় পাঠানো হয় তাকে। মিশন শেষে ২০১০ সালে চট্টগ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পান। এরপর দ্বিতীয় দফায় লাইবেরিয়া মিশনে যান তিনি।
২০১৩ সালে শফিকুল ইসলাম পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হন। এক বছর পরই আবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন, এবার আইভরি কোস্টে। দেশে ফিরে তিনি হাইওয়ে পুলিশের এসপি হন।
২০১৯ সালে তাকে নৌ-পুলিশের এসপির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২১ সালে পদোন্নতি পেয়ে একই সংস্থার অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপারেশন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়ে হাইওয়ে পুলিশে যোগ দেন।

মন্তব্য করুন