প্রেসক্লাবের গেটের সামনে সাংবাদিকদের রক্তাক্ত করল দুর্বৃত্ত ও পুলিশ

রাজধানীর তোপখানা সড়কে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একদল অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত ও পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যদের হামলায় তিন সাংবাদিক ও এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সাংবাদিকরা হলেন—নিউনেশন পত্রিকার অপরাধ বিভাগের শিমুল পারভেজ ও নোমান মোশারফ, বাংলাভিশনের কেফায়েত শাকিল এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর আলম শরীফ। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিউনেশনের সাংবাদিক শিমুল পারভেজ ও নোমান মোটরসাইকেলে করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির দিকে যাচ্ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। শিমুল পারভেজ গাড়ির চালককে পেছাতে বললে গাড়ির ভেতর থেকে চালক ও যাত্রীরা গালিগালাজ শুরু করেন।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, একপর্যায়ে গাড়ির চালক ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিমুলকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। শিমুল তা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তার হাতে আঘাত লাগে এবং রক্তাক্ত হন। এরপর গাড়ি থেকে নেমে আরও কয়েকজন শিমুল ও নোমানকে বেধড়ক মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের গেটের সামনে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাটি দেখেও কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। বরং কিছু সময় পর পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীদের না থামিয়ে উল্টো আহত সাংবাদিকদের ওপরই চড়াও হন।
আহত সাংবাদিকদের একজন কেফায়েত শাকিল বলেন, ‘শিমুল ভাইকে বাঁচাতে গিয়েও আমি হামলার শিকার হই। পুলিশ আমাদের মেরে ফেলে রাখে।’
আলম শরীফ নামের কনটেন্ট ক্রিয়েটর বলেন, ‘আমি ভিডিও ধারণ করছিলাম, তখন পুলিশ আমার ওপরও হামলা চালায়।’
সাংবাদিকদের অভিযোগ, পরে তাদের জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশে থাকা পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে আরও কয়েক দফা শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় শিমুল, নোমান ও শাকিল সাংবাদিক পরিচয় দিলেও পুলিশ তা উপেক্ষা করে মারধর চালিয়ে যায়।
ঘটনার পর আহতদের সহকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান। আহত শিমুল পারভেজ বলেন, ‘আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়, এরপরও পুলিশ আমাকে রক্ষা না করে উল্টো মারধর করে। আমরা পরিচয় দেওয়ার পরও তারা থামেনি।’
ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জানতে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ঘটনার পর প্রেসক্লাবসংলগ্ন পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে প্রেসক্লাবের ভেতরে ডেকে নেওয়া হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকদের দাবির মুখে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি সাংবাদিক শিমুল পারভেজকে মারধর করছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা হামলাকারীদের ঠেকাননি। বরং আহত সাংবাদিক নোমানকে পুলিশ সদস্যরাই মারধর করতে দেখা গেছে।
সাংবাদিক নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এই ঘটনার পর সন্ধ্যায় তিন সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় মাইক্রোবাস চালককে আটক করেছে পুলিশ। তবে গাড়ির সিটে থাকা ব্যক্তিকে আটক করা যায়নি।

মন্তব্য করুন