মাদক ও চাঁদাবাজিতে জড়িত
ঢাকার সাবেক কাউন্সিলর ও দক্ষিণ বিএনপি নেতা টিপুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিএমপিতে অভিযোগ

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মো. মকবুল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন ভুক্তভোগী। এতে টিপুর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের করাতিটোলা, দয়াগঞ্জ বাজার এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের একাধিক বাসিন্দা স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রটি জমা দেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গেন্ডারিয়া এলাকায় অপরাধ জগতের ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত সাবেক কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম টিপু দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে আসছেন। স্থানীয় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, এলাকায় টিপুর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয় অথবা মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সচিবের আপন ছোট ভাই মকবুল ইসলাম টিপু। অভিযোগকারীদের দাবি, ওই সচিবের অবৈধ আয় করা শত শত কোটি টাকা বর্তমানে টিপুর হেফাজতে রয়েছে। শেখ হাসিনার ওই সচিব বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
টিপুর আরেক ভাই অপু, যিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের কথিত সাবেক ভিপি ছিলেন, তাকেও পুরান ঢাকায় মাদক ও অস্ত্রের বিস্তারের অন্যতম সংগঠক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারীরা দাবি করেন, করাতিটোলা এলাকায় টিপুর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মাদক ব্যবসা চালান একজন পরিচিত মাদক কারবারি ‘অটো সজল’। তার অধীনে রয়েছে একটি কিশোর গ্যাং, যারা এলাকায় চাঁদা আদায়সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। এই চক্রের আরেক সদস্য ‘ছোট মুসা’ ৪০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত, যিনি সজলের মাধ্যমে টিপুর জন্য মাসোয়ারা আদায় করেন।
দয়াগঞ্জ বাজার, নারিন্দা, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালসহ আশপাশের এলাকায় দোকানদার, পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি স্থানীয় কন্সট্রাকশন সাইটগুলো থেকেও চাঁদা আদায় করা হয়। কেউ চাঁদা না দিলে সাইনবোর্ড ভাঙচুর, মারধরের মতো ঘটনা ঘটানো হয়।
অভিযোগকারীরা আরও জানান, স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরগুলোও টিপুর প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি। অভিযোগ অনুযায়ী, শিব মন্দির, লোকনাথ আশ্রম, ঋষি পাড়া, নারিন্দার মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ কমিটিতে চাঁদা দিয়ে পদ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের একাধিক পরিবহন লাইন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন টিপু ও তার অনুসারীরা। ঢাকা-লাকসাম রুটে চলাচলকারী ‘তিশা ট্রান্সপোর্ট’-এর প্রতিটি বাস থেকে ৮০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। ট্রাক টার্মিনাল থেকে মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা ওঠানো হয় বলেও জানানো হয় অভিযোগপত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মকবুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কে বা কারা অভিযোগ করেছে তা আমি জানি না। ২০১৫ সালে আমি জেলে থেকেও নির্বাচন করে জয়লাভ করেছি। আমার জনপ্রিয়তা সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

মন্তব্য করুন