মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষকের ক্ষতি কমাবে: কৃষি উপদেষ্টা

শীত মৌসুমে দেশে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এর বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরাই। এবার সেই ক্ষতি কমাতেই কৃষকদের জন্য চালু হলো মিনি কোল্ড স্টোরেজ। বুধবার মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের মেদুলিয়া এলাকায় ‘ফারমার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ’-এর উদ্বোধন করেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষকের ক্ষতি কমাবে। শুধু সংরক্ষণই নয়, কৃষি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতেও এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'
তিনি অভিযোগ করেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে কৃষিপণ্য কিনে বিপুল মুনাফা করছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কুঁড়ে ঘরে থাকছেন, অথচ ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বড় বড় ভবনের মালিক হচ্ছেন। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগ যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা জানান, মানিকগঞ্জে গাজর ও শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেশি। মিনি কোল্ড স্টোরেজ চালু হলে স্থানীয় কৃষক ও ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, 'এ উদ্যোগ ধীরে ধীরে আরও সম্প্রসারণ করা হবে। প্রয়োজনে কৃষকরা অল্প খরচে বাড়িতেই ছোট আকারে কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করতে পারবেন। আমরা তাদের কারিগরি সহায়তা দেব।'
নকল ও ভেজাল বীজ নিয়ে কৃষকের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে খাল দখল, বিদ্যুৎ সংযোগসহ নানা সমস্যা শোনেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন।
কৃষিজমি সুরক্ষা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই কৃষিজমি সুরক্ষা আইন পাস করা হবে। শিল্প ও অবকাঠামোর জন্য আলাদা জমি বরাদ্দ থাকবে। নতুন আইনে এলজিইডির প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদেরও তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হবে।
অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে কৃষি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি প্রকল্প’। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে সারাদেশে ১০০টি ফারমার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ চালু করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরভিত্তিক কোল্ড স্টোরেজে ১০ টন পণ্য রাখা যায়, যার খরচ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। কনটেইনার মডেলের খরচ ১৫ লাখ টাকা। প্রচলিত কোল্ড স্টোরেজের তুলনায় এই সংস্করণটির খরচ ৭০ শতাংশ কম।

মন্তব্য করুন