সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, অস্বস্তিতে ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৫
অ- অ+

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বাজারের এই অস্থিরতা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

অতিরিক্ত মুনাফার লোভে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, শাক-সবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ প্রায় সব জিনিসের দাম বেশ কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে "নুন আনতে পান্তা ফুরোয়" অবস্থার শিকার হচ্ছেন।

হঠাৎ সবজির বাজার অস্থির হয়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। তারা নিত্যপণ্যের দাম আগুন হয়ে যাওয়ার পেছনে মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, বাজারে সরকারের মনিটরিং নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-যাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। এতে করে দেশে চুরি, ছিনতাই ও অরাজকতা বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সিন্ডিকেট এবং মজুতদারির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে, যাতে করে তারা স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে পারে।

সবজির বাজারে স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। সবজির দামের লাগামহীনতায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তারা মনে করছেন, বিগত সময়ের মতো আবার সক্রিয় হয়েছে অতি মুনাফাখোর সিন্ডিকেট। তারা নানা ছুতোয় দাম বাড়িয়ে পকেটে মুনাফা পুরছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ক্রেতাসহ ভোক্তা সংশ্লিষ্টরা।

বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রতি কেজি ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, বেগুন (লম্বা) প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচু প্রতি কেজি ৮০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৬০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরজমিন দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়, সাদা কক ৩০০ টাকা, লাল কক ২৮০-৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকায়।

শুধু মুরগিই নয়, ডিমের বাজারেও আগুন লেগেছে। গত এক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহেই দাম বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৪৫-১৫০ টাকা। সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩৫-১৪০ টাকা। হাঁসের ডিমের দাম আরও বেশি, প্রতি ডজন ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, গরু ও খাসির মাংসের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাছের বাজারে নতুন করে দাম না বাড়লেও আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের বাজারে এখনো অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য মাছের মধ্যে বোয়াল প্রতি কেজি ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকা, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২২০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৩০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ টাকা এবং পাবদা ও শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চাষের ট্যাংরা ৭৫০-৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০-৭০০ টাকা এবং মলা ৫০০-৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে ফলের দাম বেশ চড়া। বিশেষ করে বিদেশি ফলগুলোর দাম বেশ বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আপেল, মালটা, আঙুর, আনারস, পেয়ারার মতো ফলের দাম গত কয়েক সপ্তাহে বেশ বেড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব রকমের ফলের দাম বেড়েছে। এই সময়ে আঙুর, আপেল, মাল্টার কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

বাজারে প্রতি কেজি গালা আপেল বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা। সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি, মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা আর লাল আঙুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা।

অথচ এক সপ্তাহ আগেও বাজারে গালা আপেল বিক্রি হয়েছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, সবুজ আপেল বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজি, মাল্টা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা আর লাল আঙুর বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজি।

অনেক পরিবার ফলের মতো পুষ্টিকর খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

বিক্রেতারা জানান, বাজারে এই সময় দাম সামান্য কিছু বাড়লেও হঠাৎ করে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক। তাদের অভিযোগ, রাজধানীতে মানুষের জ্বরের প্রকোপ বাড়ার সুযোগে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

দেশে নিত্যপণ্যের বাজার বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীনতার শিকার। বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিযান কমে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আইনকে তোয়াক্কা না করে বাজারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে বাজারে লাগামহীনতার সৃষ্টি হয়েছে এবং সাধারণ ক্রেতারা দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো আইনের শক্ত প্রয়োগ। আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ক্রেতা ও অর্থনীতিবিদরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি। তারা মনে করেন, যদি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ আগস্ট/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে লতিফ সিদ্দিকীকে
চাঁদাবাজি ও হত্যা মামলার আসামি প্রতারক সিকদার লিটন ফরিদপুরে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন, শান্তি রক্ষায় যৌথ প্রতিশ্রুতি 
বুয়েটের সব পরীক্ষা ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা