নাফ নদীতে আরাকান আর্মির তাণ্ডব, চরম আতঙ্কে বাংলাদেশি জেলেরা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গত চার দিনে তারা ছয়টি ট্রলারসহ অন্তত ৪৪ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এতে টেকনাফ উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে তীব্র উৎকণ্ঠা।
স্থানীয় ট্রলার মালিক সমিতি জানিয়েছে, সর্বশেষ শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে দুইটি ট্রলারসহ ১১ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানান, ওই ট্রলারের মাঝি আব্দুল হাফেজ মুঠোফোনে জানাতে পেরেছিলেন যে, আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সশস্ত্র আরাকান সদস্যরা স্পিডবোটে ধাওয়া দিয়ে জেলেদের আটক করে মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “ঘটনাটি আমরা অবগত হয়েছি। গত চার দিনে আরাকান আর্মি নাফ নদী থেকে ছয়টি ট্রলারসহ ৪৪ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জেলে মালিক সমিতি জানিয়েছে।”
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রায় ২৫০ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। তাদের মধ্যে বিজিবির প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরাকান আর্মি মূলত খাবার, নিত্যপণ্য ও অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা সীমান্তবর্তী জলসীমায় বারবার প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যা সীমান্ত নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনায় ট্রলার মালিক সমিতি দ্রুত জেলেদের মুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ ও নাইক্ষ্যংদিয়া উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। সক্রিয় একটি বিদ্রোহী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। মূলত তারা রাখাইন জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসন, রাজনৈতিক অধিকার এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে আনাকে লক্ষ্য হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে সশস্ত্র অভিযান ও মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালায় তারা। সীমান্তবর্তী এলাকায় তাণ্ডব ও অপরাধমূলক কার্যক্রম, যেমন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীতে ট্রলার ও জেলেদের অপহরণ। স্থানীয় অর্থ ও সরবরাহ সংগ্রহের জন্য অপকর্মে তৎপর থাকে আরাকান আর্মি।
(ঢাকাটাইমস/২৮ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন