পাঁচ দিনেও সমঝোতা নেই বেনাপোলে পরিবহন ধর্মঘটে, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
পাঁচ দিনেও কোনো সমঝোতা না হওয়ায় বেনাপোল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার সব পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হচ্ছে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের। বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকে অতিরিক্ত খরচ করে বাড়ি ফিরছেন।
গত শুক্রবার বেনাপোল থেকে ঢাকা এবং অন্যান্য স্থান থেকে বেনাপোলগামী পরিবহনে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বাস মালিকদের আলোচনা সভা হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, পরিবহন ব্যবসায়ীরা কেন ধর্মঘট ডেকেছে সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।
এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতোরা বলেন, প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর থেকে সব পরিবহনের বাসগুলো পৌরসভার নির্দেশনা মতো চলছিল। ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলো যাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে খালি বাস পৌর বাস টার্মিনালে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে গত শুক্রবার রাত তিনটার দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বাসের যাত্রীদের টার্মিনালে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং হয়রানির শিকার হয়। পরে তাদের লোকাল বাসে করে চেকপোস্টে পাঠান টার্মিনালের থাকা পৌরসভার লোকজন।
কোনো কিছু না জানিয়ে প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বাস মালিক সমিতি সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে সোমবার যশোর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে উভয়পক্ষের মধ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দুই পক্ষই তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় কোনো সমঝোতা হয়নি।
প্রশাসন থেকে জানানো হয়, যানজট নিরসনে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পৌর টার্মিনাল থেকেই যাত্রী ওঠাতে হবে এবং নামাতে হবে।
অপরদিকে পরিবহন মালিক সমিতি থেকে বলা হয়, আগের নিয়মে বাস চলাচল করতে হবে। তা না হলে তারা বাস চলাচল বন্ধ রাখবে।
এ ব্যাপারে বেনাপোল পরিবহন সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু বলেন, ‘কয়েক দিন আগে শার্শা ইউএনও ও সুধী সমাজের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। সেখানে যানজট নিরসনে পরিবহনগুলো নতুন পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী আমরা এই টার্মিনাল ব্যবহার করছি। তবে, যাত্রী হয়রানি ও নিরাপত্তার জন্য শেষরাতের দূরপাল্লার পরিবহনগুলো যেন সীমান্ত ঘেঁষা পুরনো টার্মিনালটি ব্যবহার করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
বাবলুর রহমান বাবু আরও বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর কোনো সমঝোতা হয়নি। যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়।’
ভারতফেরত যাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভারত থেকে দেশে ফিরে এখন দেখছি দুর্ভোগের শেষ নেই। পরে তিনজন মিলে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে যশোর যাচ্ছি। সেখান থেকে পরিবহন ধরে বাড়ি যাব।’
জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজীব হাসান বলেন, ‘কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, আমরা সে বিষয়ে অবগত নই। তাদের কোনো কিছু বলার থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারে।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘নতুন পৌর বাস টার্মিনালের নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন, নারী-পুরুষের জন্যে পৃথক নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্যে কর্নার সব কিছুই রয়েছে। আমরা বলেছি, পাসপোর্ট যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা চেকপোস্টে যাত্রী নামিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু কোনো পরিবহণ সেখানে রাখা যাবে না।’
(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন