মাঠে সক্রিয়তা এনে দিয়েছে দলের শীর্ষ পদ
২০তম জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের। দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন তিনি। নেতৃত্ব দিয়েছেন যুবলীগের। আন্দোলন-সংগ্রামে বরাবরই মাঠে সক্রিয় ছিলেন তিনি। তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। নেতাকর্মীবান্ধব এই গুণটিই তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো পদে আসীন করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে বরাবরই আলোচনার শীর্ষে থাকেন ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে মন্ত্রণালয়ের চেয়ে মাঠেই সক্রিয় থাকেন তিনি বেশি। এছাড়া দলীয় ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে গণমাধ্যমে সবসময়ই তাকে সরব ভূমিকায় দেখা যায়। স্পষ্টবাদী মানুষ হিসেবে তিনি সব মহলেই প্রশংসিত।
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। তিনি বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের কলেজ জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কারা বরণ করেন। ১৯৭৫ এর পর এক নাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুইবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। রচনা করেছেন আটটি গ্রন্থ। তাঁর কয়েকটি বই হচ্ছে বাংলাদেশের হৃদয় হতে, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু, এই বিজয়ের মুকুট কোথায়, তিন সমুদ্রের দেশে, মেঘে মেঘে অনেক বেলা, রচনা সমগ্র, কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি।
১৯৯৬ সালের ৬ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন থেকে ২০০৯-এর সম্মেলন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জরুরি বিধিতে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে ‘অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি’ লেখেন। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পুনরায় দ্বিতীয়বারের মতো নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর বঙ্গভবনে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি যোগাযোগ রেলমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া তিনি কিছুদিনের জন্য রেলমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে ওবায়দুল কাদের হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/জেবি)