মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে হজক্যাম্প হোটেল
মারাত্মক অগ্নিঝুঁকি নিয়েই চলছে রাজধানীর দক্ষিণখান থানার আশকোনা এলাকার হজক্যাম্প হোটেল ভবন। মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স নামক চারতলা বিশিষ্ট ভবনের প্রতিটি তলাতেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। সেখানে ১ম তলা থেকে ৩য় তলা পর্যন্ত প্রায় ২০০টির মতো ছোট বড় দোকান রয়েছে। ৪র্থ তলাজুড়ে রয়েছে হজক্যাম্প আবাসিক হোটেল।
মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স বা হজক্যাম্প হোটেল ভবনটি ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও এখনো সেখানে সতর্কীকরণ কোনো ব্যানার টানায়নি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এমনকি ভবনে থাকা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়নি কোনো নোটিশ। ঢাকা টাইমসকে এমনটাই বলেছেন সেখানে থাকা ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে ভবনে থাকা একাধিক ব্যবসায়ী ঢাকা টাইমসকে জানান, নিয়মিতই ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা ভবনটি পরিদর্শন করে থাকেন। তবে তাদেরকে কেউই কোনো নোটিশ করেননি। মাঝেমধ্যে তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশিনা দিয়ে থাকেন।
হজক্যাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকেই আশকোনা এলাকায় হজে যেতে ইচ্ছুকদের ভিড় বাড়তে থাকে।
রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে জানা গেছে, এ বছর মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ জন বাংলাদেশি হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫৬২ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮০ হাজার ৬৯৫ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
হজের এই মৌসুমে বিমানবন্দর এলাকাগুলোতে হোটেলে বোর্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে আশকোনা এলাকার হজক্যাম্পের পাশের আবাসিক হোটেলটির চাহিদা থাকে খুবই বেশি। হজযাত্রীরা এই হোটেলটিতে রুম নিয়ে থাকেন।
তবে হজক্যাম্প হোটেলটি মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে থাকায় এই এলাকায় চলাচলকারী হজযাত্রীরা নিরাপত্তহীনতায় রয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
উত্তরা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহা: আলম হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, আশকোনার মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স, হজক্যাম্প হোটেলটি অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকা করা হয়েছে। তালিকাটি ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সদর দপ্তর থেকেও এই তালিকা করতে একটি টিম করা হয়েছিল। ভবনটির কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নোটিশও করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঢাকা টাইমস গিয়ে দেখতে পায় অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনটির নানা অনিয়ম। ভবনটির ১ম থেকে ৩য় তলার বেশিরভাগ দোকানেই রয়েছে ইলেকট্রনিকসের পণ্য। এছাড়াও প্রতিটি তলায় রয়েছে চায়ের দোকান, যেখানে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। নিচ তলায় খাবার হোটেল ও চায়ের দোকান থাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের সংখা সেখানে বেশি। নিচ তলায় সিলিন্ডার, ২য় ও ৩য় তলায় ইলেকট্রনিকস পণ্যে ঠাসা এবং ৪র্থ তলায় রয়েছে আবাসিক হোটেল।
সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশকোনা এলাকায় হজক্যাম্প প্রশাসনিক ভবনের বিপরীত পাশেই প্রধান সড়ক ঘেঁষা মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স ভবনের প্রতিটি তলায় পরিদর্শন করে ঢাকা টাইমস। এ সময় দেখা যায়, ভবনটির নিচ তলার প্রবেশদ্বারের বাম দিকের শেষ প্রান্তে রয়েছে টিনসেড দিয়ে তৈরি একটি মাছের বাজার। সেখানে ঝুঁকি নিয়েই মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমত বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবহার করে দোকান বসিয়েছেন। পাশের রয়েছে কয়েকটি মাংসের দোকান।
ভবনের প্রবেশদ্বারের ডান দিকের শেষ প্রান্তে খানাপিনা নামের একটি খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রেস্টুরেন্টের প্রবেশদ্বারের পাশেই দেখতে পাওয়া যায়, মুরগি ফ্রাই করা গ্রিল মেশিন, সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লছে, পোড়ানো হচ্ছে মুরগির মাংস। এর ঠিক ২-৩ মিটার দূরেই দেখতে পাওয়া যায় ৪টি গ্যাস সিলিন্ডার। গ্যাস সিলিন্ডারের পাশেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে তাদের রান্নার কাজ। এছাড়াও রেস্টুরেন্টটির ভেতরে রয়েছে কয়েকটি এয়ার কন্ডিশনার।
ভবনটির ২য় তলায় মানি এক্সচেঞ্জ ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের দোকান রয়েছে। এ দোকানগুলোতে নেই অগ্নিনির্বাপণ গ্যাস সিলিন্ডার। ভবনটিতে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ যাতায়াত করেছেন। ৩য় তলায় রয়েছে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ও এয়ার টিকিট বিক্রির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এর ৪র্থ তলাজুড়ে রয়েছে হজক্যাম্প আবাসিক হোটেল।
হজক্যাম্প হোটেলের ম্যানেজার মো. শাহজাহান ঢাকা টাইমসকে বলেন, এয়ারপোর্টে ফ্লাইট বেশি হলে বর্ডারের চাপ থাকে। তাছাড়া সব সময়েই এই এলাকায় আবাসিক হোটেলের ভালো চাহিদা রয়েছে। ২০১৫ সালে এই মার্কেটে ‘হোটেল হজক্যাম্প লিমিটেড’ যাত্রা শুরু করে। হোটেলটিতে মোট ৪৬টি রুম রয়েছে। এর মধ্যে এসি রুম ৬টি, পুরুষ স্টাফ ৫ জন এবং নারী ক্লিনার ৩ জন। হোটেলটি পরিচালনা করছে পেঙ্গুইন ইন্টারন্যাশনাল । এছাড়াও এই ভবনের দায়িত্বেও রয়েছেন তারা।
মো. শাহজাহান বলেন, এক বছর আগে এই ভবনে একটি কম্পিটারের দোকানে আগুন লেগেছিল। তবে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগলে আমরা যেন তাড়াতাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি সেইজন্য বর্তমানে ১১টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রেখেছি।
ফায়ার সার্ভিস হোটেলটি অগ্নিঝুঁকির তালিকা করেছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গত মাসেও এসে গেছে। তবে আমাদের কোনো নোটিশ করেনি।
মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্সের ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস আমাদের কোনো ধরনের নোটিশ করেনি। ভবনটি ঝুকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে এটা আমরা জানি না।
মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়িক সমিতির সভাপতি কাজী মোবারক হোসেন ফরাজী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এক সময় এই ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ভবনটি ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়ম ছিল। আমরা নিজ উদ্যোগে যতটুকু পারছি করছি। বর্তমানে ভবনটিতে প্রায় ২০০টির মতো দোকান আছে। ভবনে ব্র্যাক ব্যংকের এটিএম বুথ রয়েছে। প্রতিটি তলাতেই বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন।হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, হজযাত্রীদের জন্য পুরো এয়ারপোর্ট এবং এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও এখানে কাজ করছে। পুরুষের পাশাপাশি নারী হজযাত্রীদের সেবায় আলাদা নারী কমিটি রয়েছে।
অগ্নিঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, হজক্যাম্প এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের রেগুলার ইউনিট রাখা হয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টাই এখানে অবস্থান করছেন। মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্সের ভবনের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি সেটি অগ্নিঝুঁকিতে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
(ঢাকাটাইমস/১৫মে)