বিএনপি ও তারেক রহমানের চরিত্র হননের ঘৃণ্য অপচেষ্টার প্রতিবাদ ফখরুলের

সম্প্রতি সংঘটিত এক মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং বিশেষ করে সুপরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব জনাব তারেক রহমানের চরিত্র হননের ঘৃণ্য অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
সোমবার দুপুরে বিএনপির গুলশানস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাম্প্রতিককালে রাজধানী ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সংঘটিত লালচাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি জানায়।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা বা উপস্থিতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ঘটনার সাথে জড়িত বলে যাদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলার আলোকে আজীবন বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মামলার এজাহারের অসংগতি প্রসঙ্গে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, তাদের উল্লেখিত তিনজন অপরাধীর নামের স্থলে এমন তিনজনের নাম সংযুক্ত করা হয় যাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোাগ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি, নৃশংসতার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের এপর্যন্ত গ্রেপ্তার দূরে থাক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এখনো তাদের নাম-পরিচয় পর্যন্ত উদঘাটনে সক্ষম হয়নি। এছাড়াও আমরা বর্তমান সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছি। এরূপ দৃঢ় দলীয় অবস্থান থাকা সত্ত্বেও একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে আমাদের দল এবং শীর্ষ নেতৃত্বের শালীনতা ও চরিত্রহননের দুঃসাহস প্রদর্শন করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে কি না এবং এর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় এই ধরনের ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত তিনটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড, কুমিল্লায় মসজিদের ইমাম হত্যা, খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব মোল্লাকে হত্যা ও রগকাটা; এমন হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সকলের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সমমানের ছিল কি না সে প্রশ্নও তোলা যেতেই পারে।
পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, জনসম্মুখে এরূপ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ ছাড়া বিনা বাধায় ভিডিও ধারণ যুক্তিসঙ্গতভাবেই অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। মাত্র গুটিকয়েক সন্ত্রাসী দ্বারা প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ায়, মাত্র এক বছর আগে সংঘটিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীতে পুনরায় আইনের শাসন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে বিবেচিত হতেই পারে।
তিনি বলেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল ও তার প্রধান নেতৃত্বকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন এবং অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও সেই ফ্যাসিবাদের যুগে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ৯ জুলাইয়ের ঘটনা ১১ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর, সবচেয়ে প্রাইম টাইমে ইন্টারনেটে ছড়ানো শুরু হয়। পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে থেকেই তৈরি করে রাখা ফটোকার্ডগুলো অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অনলাইনে ভুয়া তথ্য প্রচারের ক্যাম্পেইন শুরুর আগে থেকেই অপপ্রচার সামগ্রী তৈরি করে রাখা হয়েছিল। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্র হনন; দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা কুন্ঠিত হই, যখন লক্ষ্য করি বিকৃত রুচির এই বিকারগ্রস্ত গোষ্ঠী তাদের অশ্লীল- কদর্য মানসিকতা কোমলমতি শিশু কিশোরদের কন্ঠে প্রতিধ্বনিত করিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মের মূল্যবোধ ধ্বংস করছে শুধু মাত্র তাদের কুৎসিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে।
সুপরিকল্পিতভাবে দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলের শীর্ষ নেতা যিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, যিনি দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে পরিচালিত স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের প্রধান নেতা ও সাফল্যের কারিগর এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ পুরুষ, তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ এমন বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছি।
দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ আজ উন্মোচিত। এই অপরাজনীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার প্রতি আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা গভীর শঙ্কার সাথে লক্ষ্য করছি সুপরিকল্পিতভাবে এই অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ , সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের সমার্থক রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব।
তিনি বলেন, গুটিকয়েক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। যে তারুণ্য ফ্যাসিবাদের পতনে আমাদের সাথে অগ্রসৈনিক ছিল, আজ দেশের প্রয়োজনে তাদের সাথে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অপচেষ্টাই আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারবে না। সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পিত ফাঁদে পা না দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের যেকোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আমরা এই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে দেব না। সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে সাথে নিয়ে এদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংকল্পে আমরা বরাবরের মতোই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/জেবি)

মন্তব্য করুন