আশুগঞ্জে হাতেভাজা রাসায়নিকমুক্ত মুড়ি তৈরির ধুম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের চর সোনারমপুর গ্রাম হাতেভাজা রাসায়নিকমুক্ত (ক্যামিকেলমুক্ত) মুড়ি তৈরির জন্য বেশ পরিচিত। পবিত্র মাহে রমজানে এর চাহিদা বেড়ে যায় বলে মুড়ি তৈরির ধুম পড়েছে সেখানে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার চালের দাম বেশি থাকায় মুড়ি ভেজে তেমন লাভবান হচ্ছেন না কারিগররা। কারণ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন তারা।
আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা এক শ্যামল চর সোনারামপুর গ্রাম। ছয় হাজারের মতো অধিবাসীর এই গ্রামের অধিকাংশই জেলে পরিবার। মাছ ধরে আর খই-মুড়ি ভেজে চলে তাদের জীবন। এ গ্রামে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা মুড়ি ভেজে তা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন। পুরুষরা নদীতে মাছ ধরার কাজ শেষে বাড়িতে এসে গৃহিণীদের সঙ্গে মুড়িভাজায় যোগ দেন।
সারা বছরই আশুগঞ্জের মুড়ির চাহিদা দেখা যায় জেলার বাজারগুলোতে। তবে রমজান এলে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গ্রামের নারী-পুরুষ এখন মুড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উৎপাদিত মুড়ি কেউ কেউ পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ নিজেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করেন। পাইকারি প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। আর খুচরা প্রতি কেজি ১০০ টাকা।
তাদের উৎপাদিত মুড়ি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কোনো ধরনের কেমিক্যালের মিশ্রণ না থাকায় হাতে ভাজা এ মুড়ি খেতে খুব সুস্বাদু বলে জানান ক্রেতারা।
মুড়ির পাইকাররা জানান, আশুগঞ্জের হাতে ভাজা মুড়ি সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বেশি থাকলেও সরবরাহ কম। তাই বাজারে মেশিনে তৈরির মুড়ি এখন বেশি।
সরবরাহ কম থাকার বিষয়ে মুড়ি প্রস্তুতকারক বশির আহমেদ জানান, মুড়ি তৈরিতে যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয় তাদের, সে তুলনায় আয় হয় না। রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আছে পুঁজির অভাব। চড়া সুদে ঋণ এনে পুজি বিনিয়োগ করায় সুদ দিয়ে মুনাফা থাকেই না বলা যায়। পুজির অভাবে এ ব্যবসা ঠিকভাবে করতে পারছেন না তারা।
এ ছাড়া হাওরে ধান তলিয়ে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় চালের মান খুব বেশি ভালো না এবং দামও বেশি। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় মুনাফা হবে খুবই কম। জনগণকে কেমিক্যালমুক্ত মুড়ি খাওয়াতে অল্প সুদে তাদের মাঝে ঋণ বিতরণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান বশির আহমেদ।
এদিকে, মুড়ি ব্যবসায়ীদের ঋণ সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিরুল কায়ছার।
(ঢাকাটাইমস/১জুন/মোআ)
মন্তব্য করুন