ঈদের আগে এসি বাসের ভাড়া লাগামহীন
ঈদ এগিয়ে আসার সাথে সাথে বাস-ট্রেনের টিকিটের জন্য আকুতিও বাড়ছে। গত সোমবার থেকে ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয় বাস-ট্রেনের। হুঁশিয়ারির মধ্যেও প্রতি বছরের মতো এ বছরও বেড়েছে বাসের টিকিটের দাম। সরকার আদতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, আর তাতেও মানিয়ে নিচ্ছে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষেরা।
ভাড়া বেড়েছে প্রায় সব ধরনের বাসের। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা এসি বাসের ভাড়া এখন লাগামছাড়া। স্বাভাবিকের তুলনায় দেড় গুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে তারা। এই বাসগুলোর ভাড়া কত হবে, সেটা নির্ধারণ করে না বিআরটিএ। এই সুযোগটাই নিচ্ছে মালিকপক্ষ।
এমনিতে যে বাসের টিকিট বিক্রি হতো ৬০০ থেকে ১৩০০ টাকা, সেই টিকিটের দাম ঈদের বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয়শ থেকে দুই হাজার টাকা। পরিবহন কোম্পানির কর্মীরা বলছেন, তীব্র যানজটে দিনে একটির বেশি ট্রিপ মারা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে তেল, কর্মী খরচ ও আনুষঙ্গিক হিসাবের জন্য।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিএ থেকে নন এসি বাসের ভাড়া নির্ধারিত করে দেওয়া আছে। সেই তালিকা প্রতিটি কাউন্টারে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সেখানে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১.৪২ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ আছে। সঙ্গে ফেরি ও অন্যান্য খরচ মিলে পড়ে দেড় টাকার বেশি। কিন্তু বিআরটিও থেকে এসি বাসের ভাড়া কেন নির্ধারণ করা হয় না-সে প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে।
রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে, এসি বাসের কাউন্টারগুলোতে কোনো ধরনের ভাড়ার তালিকা নেই। কাউন্টার মাস্টাররা বলছে, মালিকপক্ষ ভাড়া নির্ধারণ করে থাকে।
কোন কোন বাস কোম্পানি ১৮ তারিখ থেকে বাড়িয়েছে তাদের টিকিট মূল্য। আবার কেউ ২০ তারিখ থেকে বেশি রাখছে এসি বাসের টিকিটের বাড়তি মূল্য।
এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে হানিফ, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সোহাগ, ইউনিক, সাকুরা, এসবি, গোল্ডেন লাইন, এসআর, পূর্বাশা প্রভৃতি। এর মধ্যে স্ক্যানিয়া, ভলবো, আরএম-২, ম্যান, হোন্দায় উল্লেখ্যযোগ্য। বাস যত বেশি দামি, ভাড়াও তত বেশি। এই বাসগুলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উওরাঞ্চলে বেশি চলে। এছাড়া চট্টগ্রামের পথেও এর ব্যাপক চল রয়েছে।
এসআর পরিবহনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, সকাল ছয়টার এসি বাসটি গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পৌঁছানোর কথা ছিল বেলা একটায়। বাসটি ফেরত এসে রাতে আরেকটি ট্রিপ ধরার কথা ছিলো। কিন্তু বিকাল পাঁচটায় ও বাসটি পৌঁছায়নি গাইবান্ধায়। এক্ষেত্রে মালিকের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আর তাই মালিক সব বিষয় বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও করার কিছু নেই।
এই কর্মকর্তা জানান, আগের তুলনায় এসি প্রতিটি বাসের ভাড়া অর্ধেকের বেশি বাড়ানো হয়েছে।
দ্রুতি পরিবহনের এক কর্মচারী বলেন, ‘এসি বাসে ঈদে ভাড়া হয় দ্বিগুণ। কারণ, এক ঈদের সময় একমুখি ট্রিপ মারা হয়। অন্য সময় দেখা যায় বাস ভরে যাত্রী যাচ্ছে আসছে। কিন্তু ঈদের সময় এমনটি হয় না। তাই মালিকরা চেষ্টা করে সব খরচ বাদেও যেন তার লভ্যাংশ আসে।’
ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএকে জানানো হয় কি না এমন প্রশ্নে বাস মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, ‘মালিক ও বিআরটিএ বসেই ভাড়া নির্ধারণ করে। তবে এখানে মালিকের স্বার্থ বেশি গুরুত্ব পায়।’
এদিকে কুষ্টিয়াগামী এসবি পরিবহনের এক যাত্রী জানান, ২০ তারিখ থেকে এসি বাসের টিকিটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। আগে যে এসি বাসের টিকিট ছিলো ছয়শ টাকা সেটা বেড়ে হয়েছে নয়শ টাকা। আর সাতশ টাকার এসি টিকিটের দাম এক হাজার টাকা এবং এক হাজার টাকার টিকিট বেড়ে হযেছে ১৩শ টাকা।
তবে এই ভাড়া বৃদ্ধির রীতির মধ্যে সোহাগ পরিবহন ব্যতিক্রম। গাবতলীতে এই পরিবহনের এক কাউন্টার মাস্টার জানান, ঈদে তাদের এসি বাসের ভাড়া বাড়েনি। আগের মূল্যেই রাখার নোটিশ নিয়েছে মালিকপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মালিক যদি ভাড়া পোষাতে পারে তাহলে অন্য পরিবহণগুলো পারবে না কেন?’।
ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এসএস/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন