ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ঝুঁকি বিবেচনায় ছয় হটস্পট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:০৩
অ- অ+

অনুমোদন পাওয়া একশ বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ঝুঁকি বিবেচনায় ছয়টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, মোট স্থল এলাকা এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্লাবনভূমি ৮০ শতাংশ। পাহাড়ি অঞ্চল ১২ শতাংশ, সোপান এলাকা ৮ শতাংশ। ১৬ কোটি মানুষের আবাসস্থল সমগ্র বাংলাদেশে এ মহাপরিকল্পনা আওতাভুক্ত। পদ্মা, মেঘনা আর যমুনা নদীর মিলনস্থলে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম গতিশীল এ ব-দ্বীপ।

ঝুঁকি বিবেচনায় ছয়টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে এই পরিকল্পনায়। হটস্পটগুলো হচ্ছে— উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা অঞ্চল এবং নগরাঞ্চল। পানি ও জলবায়ুজনিত অভিন্ন সমস্যায় কবলিত এই অঞ্চলগুলোকেই হটস্পট হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৮০টি প্রকল্প সমন্বিত এ পরিকল্পনার প্রথম ১০ বছরের জন্য দুই লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।

বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ

ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলা হয়েছে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা (২০৫০ সালের মধ্যে তাপমাত্রার বৃদ্ধির সম্ভবনা ১.৪-১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।বৃষ্টিপাতের তারতম্য (সামগ্রিকভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে বৃষ্টিপাত বাড়বে, তবে দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি (দেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। প্রতিবছর নদী ভাঙনে প্রায় ৫০ হাজার বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দেশের অভ্যন্তরে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ (২০৫০ সালের দিকে উচ্চতা ০.২-১.০ মিটার বৃদ্ধি পেতে পারে। লবণাক্ততা ১৭.৫ শতাংশ এলাকায় এক পিপিটি এবং ২৪ শতাংশ এলাকায় পাঁচ পিপিটি বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া জলাবদ্ধতা, পলি জমা, আন্তঃদেশীয় নদী ব্যবস্থাপনা।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ নির্দিষ্ট অভীষ্টসমূহ

১. বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

২. পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও নিরাপদ পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।

৩. জলাভূমি এবং বাস্তুতন্ত্র সংবক্ষণ এবং তাদের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা।

৪. আন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও ন্যায়সঙ্গত সুশাসন গড়ে তোলা।

৬. ভূমি ও পানি সম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চত করা।

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) তথ্য অনুযায়ী

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর নীতি দৃশ্যকল্প এর ভূমিকা এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে এর অবদানকে ব্যাখ্যা করার জন্য, বিকল্প নীতি হিসেবে দুইটি পরিস্থিতি বা দৃশ্যকল্প বিবেচনা করা হয়েছে।

প্রথমটি হলো স্থিতাবস্থা নীতি: এটি মূলত সরকারের রূপকল্প ২০২১, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থাৎ যা আছে তাই। তবে স্থিতাবস্থা নীতির অধীনে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেলে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও মূলধনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, নগরায়নের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। মূলত এ দৃশ্যকল্পে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ ব্যতীত বিদ্যমান সব নীতিকে বিবেচনা করে হয়েছে।ব-দ্বীপ ঝুঁকি ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ব্যতীত এটিই বর্তমান সময়ে স্থিতাবস্থা নীতি।

দ্বিতীয়টি ব-দ্বীপ পরিকল্পনা নীতি গ্রহণ। এই দৃশ্যকল্পে আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপরর‌্যয় এবং ঝুঁকির মধ্যে উচ্চতর ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন এবং ব-দ্বীপ সম্পর্কিত অন্যান্য অভিযোজন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পরিস্থিতে প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনকে নিশ্চিত করে তোলা। এ সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে সহায়ক কৌশল হিসেবে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

জাতীয় আর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সাংবাদকিদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের কোনো নদী দূষণে মরবে না। তিনি বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে গঠন করা হবে ডেল্টা তহবিল। এই তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল, বিশেষ করে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে (পিপিপি) বিবেচনা করা হয়েছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থায়ন সম্বলিত বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর মধ্যে ২ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে। জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল হতে এবং শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে।

আরও বলা হয়েছে, অর্থায়নের ক্ষেত্রে কস্ট রিকভারির জন্য বেনিফিশিয়ারি পে প্রিন্সিপাল অনুসরণ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বড় শহরগুলোতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় আদায়ের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করার চেষ্টা করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে সময়ের আবর্তনে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ২০১৮ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্যপ্রকল্প এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগ সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে পরিকল্পনায়। এগুলো হচ্ছে, উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩টি প্রকল্পের জন্য ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র এবং খড়া প্রবণ অঞ্চলের জন্য নয়টি প্রকল্পের আওতায় ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ছয়টি প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য আট প্রকল্পের অনুকূলে পাঁচ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। নদী এবং মোহনা অঞ্চলে সাতটি প্রকল্পের অনুকূলে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এবং নগরাঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/জেআর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে অশ্লীলতা: ৬ মডেল ও ৩ নির্মাতাকে আইনি নোটিশ
জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে আপিলের রায় ১ জুন
প্রতিবন্ধী উন্নয়নে দেশব্যাপী ডাটা সংগ্রহ শুরু, সিলেট সেবাকেন্দ্রে পরিদর্শন টিম
সাংবাদিকতার গতিপথ পাল্টে দিয়েছে মোজো: কাদের গনি চৌধুরী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা