হলি আর্টিজান রায়ের প্রতিক্রিয়া
নেপথ্যের কারিগররা চিহ্নিত না হলে বিপদ: নিরাপত্তা বিশ্লেষক

দেশে জঙ্গিসহ সক্রিয় সন্ত্রাসীদের অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে পুলিশ ও র্যাব। তবে হলি আর্টিজানের মতো হামলার নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে না পারলে বিপদ থেকে যায় বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ।
তিনি বলেন, যারা অস্ত্র নিয়ে এখনো মাঠে আছে, তাদের দমন করতে না পারলে তারা নিরীহ মানুষকে মারবে।
গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ।
আজ বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান হলি আর্টিজান মামলায় সাতজনের ফাঁসির আদেশ এবং একজনকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আট আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি হলি আর্টিজান মামলার রায়টা এখনো পড়িনি। তবে আমার মনে প্রশ্ন এই ঘটনা (হামলা) তারা (হামলাকারীরা) কেন ঘটাল এবং উদ্দেশ্য কী ছিল?’
‘মূলত ভু-রাজনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটতে আমরা দেখেছি। হলি আর্টিজান হামলার নেপথ্যের কারিগরদের যদি চিহ্নিত করতে না পারি, তাহলে আমরা বিপথে যাব। আর চিহ্নিত হলে বাংলাদেশ আরও বেশি নিরাপদ হবে অথবা আস্থার জায়গায় ফেরত যাবে।’
জঙ্গিবাদ ও এর পুনরুত্থান ঠেকাতে কঠোর ও কোমল দুভাবেই ব্যবস্থাই নিতে হবে এবং তা বেশ চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদের মতাদর্শের অবস্থান মানুষের মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক থেকে যদি জঙ্গিবাদের মতাদর্শ সরানো না যায়, তাহলে এর পুনরুত্থানের আশঙ্কা থাকে।’
‘জঙ্গিদের মনে বা মস্তিষ্কে যে অবস্থা নিয়েছে, সেটা প্রতিস্থাপন করতে হবে শান্তির মতাদর্শ দিয়ে। সেটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। যেটাকে আমরা বলছি সফট লাইন। আমরা দেখছি, সফট লাইনে বাংলাদেশ এখন অনেক বড় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। এর সার্থকতা আমরা তখনই দেখব যেভাবে আমরা হার্ডলাইনে সার্থক হয়েছি। সফট লাইনে সার্থকতা একটু সময়সাপেক্ষ।’
একসময় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আমরা দায়ী করতাম জঙ্গিবাদের জন্য। এখন ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে জঙ্গি মতাদর্শে। মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদীরা উঠতি বয়সী ছেলেদের টার্গেট করে জঙ্গিবাদে নিয়ে আসে। একসময় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের ঝোঁক বেশি ছিল। কিন্তু তারা দেখেছে এই ঝোঁক দিয়ে তেমন কোনো সার্থকতা নেই। তখন তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে।’
এ ক্ষেত্রে তারা হিযবুত তাহরীরকে অবলম্বন করেছে জানিয়ে আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হিযবুত তাহরীরকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজে প্রবেশ করেছে জঙ্গিবাদীরা।’ এই প্রবেশের ক্ষেত্রে যারা ভূমিকা রেখেছে তাদের নজরদারিতে রাখার দরকার বলে মনে করেন তিনি।
জঙ্গিবাদ নির্মূলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হলি আর্টিজানে যারা হামলা চালিয়েছে তারা কিন্তু বড় বড় স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তান যখন বেশি সময় কাটায় তখন তারা সেখানে কী করছে পিতা-মাতা সে-রকম জানে না। তাই তাদের বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভুমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে সমাজের ভূমিকা, পিতা-মাতারও ভূমিকা অবশ্যই রয়েছে। সব মিলিয়ে যদি লড়া যায় তাহলে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সফলতা পাওয়া যাবে।
(ঢাকাটাইমস/২৭/নভেম্বর/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন