জয়পুরহাটে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ মার্চ ২০২০, ২০:৪৩

‘আই অ্যাম সরি। মাফ করে দিও আমাকে। আমি তোমাদের ভালো মেয়ে হতে পারলাম না। মাফ করে দিও। খোদা হাফিজ।’ একটি সাদা কাগজে এই বাক্যগুলো লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেছে জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দিবা শাখার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোরী তাসনুবা নাবিলা চৌধুরী নীর।

মঙ্গলবার রাত ৯টায় জয়পুরহাট থানা পুলিশ আরাফাত নগরের একটি বাসা থেকে নাবিলার লাশ উদ্ধার করে। নাবিলার বাবা আব্দুস সামাদ চৌধুরী বগুড়ায় রেশম বোর্ডের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। মা মাহমুদা বেগম জয়পুরহাট মোসলিম নগর এলাকার মহিলা কলেজের পরিদর্শক। তাদের গ্রামের বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামে।

নাবিলার মৃত্যুর পরের দিন সকাল ৮টায় জয়পুরহাট শহরের ট্রাক টার্মিনাল এলাকার চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি কক্ষ থেকে ইনজামামুল হক ইমরান নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর গলায় পেচিয়ে ইমরান আত্মহত্যা করে। ইমরান জয়পুরহাট পৌরসভার মাদারগঞ্জ মহল্লার কলা ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনের ছোট ছেলে এবং জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

মৃত্যুর আগে ইমরান বাম হাতে কলম দিয়ে লিখে যায় ‘ইমরান+নাবিলা আমার জন্য যে চলে... আমিও গেলাম’। এর মাধ্যমে তিনি বলে যান নাবিলা তার প্রেমিক ছিল। নাবিলা আত্মহত্যা করায় একই পথ তিনিও বেছে নেন।

ইমরানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জয়পুরহাট রামদেও বাজলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় নাবিলার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ইমরান মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাকে জয়পুরহাট ট্রাক ট্রার্মিনাল এলাকায় চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে তিন মাস চিকিৎসা দিয়ে সুস্থও করা হয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান।’

গত মঙ্গলবার নাবিলার মৃত্যুর খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ইমরান তাকে দেখতে যায়। পরে বাড়ি ফিরে সে জানায়, মৃত্যুর আগে নাবিলা তাকে কয়েকবার ফোন করেছিল। কিন্তু ইমরান রিসিভ করেনি। নাবিলার মৃত্যুর পর ফোন করার বিষয়টি আর ভুলতে পারছে না সে। সবসময় অস্থিরতা দেখিয়ে শুধু কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘কি কথা বলতে চেয়েছিল নাবিলা। ফোন রিসিভ না করায় সেটা জানা হলো না।’

এরপর রাত ৮টার দিকে ইমরান আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পরিবারের বাধার কারণে রক্ষা পায়। রাত ১০টার দিকে ইমরানের বাবা ফরিদ উদ্দিন ট্রাক টার্মিনাল এলাকার চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে ইমরানকে রেখে আসেন। এখানে আগেও চিকিৎসা নেন ইমরান। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে বাড়িতে খবর আসে ইমরান আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

ইমরানের বাবা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে নাবিলা নামে মেয়েটির তিন বছর থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমরা গরিব মানুষ। ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি। কিন্তু কিছুতেই শোনেনি। নাবিলার আত্মহত্যার খবর পাওয়ার পর থেকে ছেলেটি যেন পাগলের মতো আচরণ শুরু করে।’

এ বিষয়ে নাবিলার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার যোগাযোগ করা হলেও পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা এমএ জাহাঙ্গীর তুহিন বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে ইমরানকে তার বাবা ফরিদ উদ্দিন চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে যান। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে আমাদের স্টাফ রুমে ইমরানের মরদেহ ঝুলতে দেখে আমরা পুলিশকে খবর দেই। পরে পুলিশ এসে তার লাশ নিয়ে যায়। প্রেমসংক্রান্ত কারণে ইমরানের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা তার বাবা আমাদের জানালে হয়তো এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটত না। আমরা তাকে দৃষ্টির আড়াল হতে দিতাম না।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার খাঁন বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নাবিলা এবং ইমরানের আত্মহত্যার বিষয়টি প্রেমের কারণেই ঘটেছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই দুটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেল। এজন্য সন্তানদের বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। দুটি ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে।’

(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/কেএম/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :