যেসব বলিতারকাকে হাজতে যেতে হয়েছিল

পর্দার পাশাপাশি বাস্তবেও তাদের জীবনে নানা বৈচিত্র। বলিতারকাদের জীবনযাপনই যেন রাংতায় মোড়া। কিন্তু চমক লাগা জীবনেও তাদের কাছে দুঃসময় এসেছে বারংবার। কাউকে কাউকে তো রীতিমতো বাস করতেও হয়েছিল হাজতে। শুধু সালমন বা সঞ্জুবাবা নন, এই লিস্টে কিন্তু রয়েছেন শাহরুখ, সাইফ, অক্ষয়ও। চলুন দেখে নেওয়া যাক বলিউড তারকাদের মধ্যে আরও কারা কারা জেলে কাটিয়েছেন বা লকআপের দোরগোড়ায় গিয়েছিলেন।
ফারদিন খান: একসময় ফারদিনের খানের জনপ্রিয়তা এক সময় ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু হঠাৎ ২০০১ নাগাদ তাঁর জীবনে ঘনিয়ে আসে এক চরম অন্ধকার সময়। এক ড্রাগ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লুকিয়ে কোকেন কিনতে গিয়ে ধরা পড়ে যান তিনি। তাঁর পাঁচ দিনের মতো জেল হয়েছিল। তার কাছ থেকে এক গ্রামের মতো কোকেন উদ্ধার হয়েছিল।
আইন অনুযায়ী এক গ্রাম কোকেন রাখলে নয় ছয় মাস জেলে থাকতে হয় অথবা নেশামুক্তি কেন্দ্রে যেতে হয়। ফারদিন বেছেছিলেন দ্বিতীয় অপশনটিকেই। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি রিহ্যাবে কাটিয়েছিলেন বেশ কিছু মাস। যদিও তার জেল যাওয়া কেরিয়ারে বেশ প্রভাব ফেলেছিল।
শাইনি আহুজা: ‘ও লামহে’, ‘ভুলভুলাইয়া’ সহ একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করা শাইনি আহুজা এখন বিস্মৃতির পথে। তার কারণ তিনি নিজেই। অভিযোগ ছিল বাড়ির কাজের লোককে ধর্ষণ করেছেন তিনি। বিচারে তার সাত বছর জেল হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে জামিনে তিনি মুক্তি পান।
কিন্তু সেসময় শাইনি আহুজার কীর্তি সে সময় সিনে মহল তোলপাড় করেছিল। বেশিরভাগ সেলেব যখন নিন্দায় সরব হয়েছিলেন তখন শাইনির স্ত্রী এবং অভিনেতা আরশাদ ওয়ারশি শাইনির পাশে দাঁড়ান। আরশাদ বলেছিলেন, ‘কত খুনি, সন্ত্রাসবাদী সারা দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কোনও শাস্তি হয় না। অথচ শাইনির বেলাতে সাত বছর জেল!’ আরশাদের এই বক্তব্য বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল সেসময়।
জন আব্রাহাম: বাইক চালাতে বরাবরই ভালবাসেন জন আব্রাহাম। কিন্তু এই বাইক রাইডই যে তার জীবনে কাল হয়ে উঠবে তা কি তিনি কোনওদিনও ভেবেছিলেন? কিন্তু হয়েছিল ঠিক এমনটাই। এক রাতে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন জন। স্পিড ছিল বেশ খানিক বেশি। হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জনের বাইক ধাক্কা মারে এক সাইকেল আরোহীকে। গুরুতর জখম হন তিনি।
কিন্তু জন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাননি। নিজেই সেই ব্যক্তিকে নিয়ে হাসপাতালে যান এবং পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করেন। এর পরেই জনের ১৫ দিনের জেল হয়। কিন্তু কর্তব্য থেকে না পালনোর জন্য মানবিকতার খাতিরে তিনি জামিন পেয়ে যান।
মনিকা বেদী: নব্বই দশকে তিনি ছিলেন মুভি-ফ্রিকদের হার্টথ্রব। কিন্তু তাকেও জীবনের তিন বছর কাটাতে হয়েছিল জেলে। ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ আবু সালেমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। পর্তুগালের বিমানবন্দরে আবু সালেমের সঙ্গে নকল পাসপোর্টের নিয়ে ধরা পড়েছিলেন তিনি। বিচারে তার তিন বছর জেল হয়।
পর্তুগালের জেলে তিন বছর কাটানোর পর ভারতে ফিরে আসেন তিনি। এখানেও তার জেল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একই অপরাধে দুই দেশেই যাতে তাকে জেল খাটতে না হয় সে বিষয়ে আবেদন জানান তিনি। তার আবেদন মঞ্জুর হয়। আবারও কামব্যাক করেন মনিকা। বিগ-বসের সেকেন্ড সিজনে দেখা গিয়েছিল তাকে।
রাজপাল যাদব: সাতেপাঁচে না থাকা এই মানুষটিকেও টানতে হয়েছে জেলের ঘানি। ‘আতা পাতা লাপাতা’ বলে একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন রাজপাল। সেজন্য এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে বেশ কিছু টাকা ধার করেছিলেন। বক্স অফিসে সেই ছবি চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়। আর রাজপালও সময়মতো সেই টাকা দিতে পারেননি। এরপরেই রাজপালের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন সেই প্রযোজক। তিন মাস তাকে জেলে কাটাতে হয়। দিতে হয় জরিমানাও।
সাইফ আলি খান: পতৌদির ছোটে নবাবকেও ঢুকতে হয়েছিল লকআপে। কারিনা কাপূর এবং মালাইকাকে নিয়ে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই এক ব্যক্তিকে সজোরে চড় মারেন তিনি। চড় এতটাই জোরে ছিল যে, সেই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এই অপরাধে লকআপে যেতে হয়েছিল তাকে। পরে যদিও ছাড়া পেয়ে যান তিনি।
অক্ষয় কুমার: ২০০৯ সালে একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আচমকাই অক্ষয় টুইঙ্কলের কাছে এসে তার প্যান্ট আনজিপড করার মতো অদ্ভুত দাবি জানান। লোকসমক্ষে এ রকম ব্যবহার করার জন্য তাকে জেলে যেতে হয়েছিল কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি জামিনে মুক্তি পেয়ে যান তিনি।
সুরজ পাঞ্চোলি: বছর কয়েক আগে ‘চিনি কম’ খ্যাত জিয়া খানের আত্মহত্যার কথা মনে আছে? জিয়া মারা যাওয়ার পর তার একটি সুইসাইড নোট প্রকাশ পায়। সেখানেই জানা যায়, জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আদিত্য পাঞ্চোলি পুত্র সুরজের। এরপরেই সুরজের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন জিয়ার মা রাবিয়া। জেলে যেতে হয় অভিনেতাকে।
শাহরুখ খান: চমকে গেলেন? হ্যাঁ, শাহরুখ খানকেও যেতে হয়েছিল লকআপের দোরগোড়ায়। তখন কেরিয়ারের একেবারের শুরুর দিক। একটা ম্যাগাজিনের এডিটর শাহরুখের নামে একটি গসিপ ছেপে দেন। বাস্তবের সঙ্গে সেই গসিপের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ক্ষুব্ধ শাহরুখ সেই সম্পাদককে ফোন করে খানিক রেগে গিয়েই বাজে ব্যবহার করে ফেলেন। ব্যস এর পরেই টুইস্ট।
এক ফিল্মের সেটে ছিলেন শাহরুখ। সেখানে পুলিশ আসে। শাহরুখ ভেবেছিলেন পুলিশ বুঝি তার ফ্যান। দেখা করতে এসেছেন। কিন্তু এ কী! সোজা বলিউড বাদশাহকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। জেলের ওই ছোট ছোট ঘর দেখে তার অবস্থা তো তখন খুব খারাপ। যদিও কিছু সময় পরেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যান তিনি। অতএব শুধু সঞ্জয় দত্ত বা সালমন খানই নন, থানায় ঘুরে লকআপের দোরগোড়ায় যেতে হয়েছে বলিউডের অনেক তারকাকেই।
(ঢাকাটাইমস/১১মে/ডিএম)

মন্তব্য করুন