গুলির ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাটক? সাইফুদ্দিন এমদাদকে ঘিরে মামলা ও বাস্তবতার ফারাক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০২৫, ১৫:২৩| আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ১৭:১৩
অ- অ+

ঢাকা ও চট্টগ্রামে একই ব্যক্তির ওপর একই দিনে একই সময়ে হামলার অভিযোগে হওয়া দুটি মামলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদের চোখে গুলি লাগার ঘটনা ঘিরে মামলা দুটির এজাহারে স্থান ও সময়ের গুরুতর অসংগতি থাকায় তা এখন বিতর্ক ও আইনি প্রশ্নের সামনে পড়েছে।

দুই মামলার তথ্য বলছে, সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদের গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার পরীবাগ ও চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন।

আদালত থেকে ঢাকার শাহবাগ থানায় আসা মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকার পরীবাগে ছাত্র-জনতার মিছিলে চোখে গুলিবিদ্ধ হন সাইফুদ্দীন। এই মামলার বাদী মানবাধিকার সংগঠনের নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এম এ হাশেম রাজু। তিনি নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেন।

চলতি বছরের ২০ মার্চ হওয়া মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, জায়েদ খানসহ মোট ২০১ জনকে আসামি করা হয়।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামের খুলশী থানায় গত ১৭ জুন হওয়া মামলার বাদী স্বয়ং সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ। তার এজাহারে বলা হয়, তিনি ৪ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরের দিন ৫ আগস্ট ওয়াসা মোড়ে দ্বিতীয় দফায় গুলিবিদ্ধ হন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১৬৭ জনকে আসামি করা হয়।

শাবাগ থানায় এম এ হাশের রাজুর করা মামলার তদন্ত চলছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর। ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, আদালত আমাদের কাছে ভুক্তভোগীর মেডিকেল সার্টিফিকেট চেয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে যোগযোগ করেও তা জোগাড় করতে পারিনি। বিষয়টি আদালতকে জানানোর পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আরও এক মাস সময় চাওয়া হয়েছে।

একই ব্যক্তির ঘটনায় চট্টগ্রামে আরেকটি মামলা বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। প্রয়োজনে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।

সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদের ঘটনা নিয়ে ঢাকায় মামলা থাকার কথা তাদের জানা ছিল না বলে জানান খুলশী থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব হোসেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী এমদাদ নিজে বাদী হয়ে আমাদের থানায় মামলা করেছেন। আগে এই ঘটনায় মামলা ছিল এটা আমাদের জানা ছিল না। আর শাহবাগ থানায় যে মামলার তদন্ত গেছে সেটা তো ভুক্তভোগী (এমদাদ) করেননি। তবে একই সময়ে দুই শহরে আহত হওয়া অবিশ্বাস্য। তদন্তেই সব বেরিয়ে আসবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ঢাকায় মামলা হয়ে থাকলে চট্টগ্রামের মামলা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থান ও সময় নিয়ে অসংগতি

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, এক ব্যক্তি দুটি ভিন্ন শহরে একই সময়ে গুলিবিদ্ধ হন এমন ঘটনা অসম্ভব। চট্টগ্রামের মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, ১ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামেই ছিলেন সাইফুদ্দীন। তাহলে তিনি ৪ আগস্ট ঢাকার পরীবাগে কীভাবে গুলিবিদ্ধ হন?

ঢাকার মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু এই প্রশ্নের উত্তরে গণমাধ্যমকে বলেন, আমি নিজে তাকে পরীবাগে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেছি এবং সেদিন রাতে চট্টগ্রামে পাঠিয়েছি।

কিন্তু চট্টগ্রামের মামলায় বাদী সাইফুদ্দীন নিজে দাবি করেছেন ১ আগস্ট থেকে তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন এবং গুলিবিদ্ধ হন নিউমার্কেট মোড়ে।

একই সময়ে ভিন্ন দুই শহরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার এমন বিভ্রান্তিমূলক মামলার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোনের লোকেশন, হাসপাতালের রেকর্ড ও মেডিকেল রিপোর্ট। শাহবাগ থানা এখনো মেডিকেল সনদ পায়নি। তাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তারা।

আইনি দৃষ্টিকোণ

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি মামলার মধ্যে সময় ও ঘটনার প্রকৃত স্থান নিয়ে এই ধরনের অসংগতি ফৌজদারি আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮২ ধারা অনুসারে, সরকারি কর্মচারীর কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অপরদিকে, দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, একই সময়ে ভিন্ন শহরে কারও আহত হওয়ার দাবি আইন ও বাস্তবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এটা কোনো ভুল নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর এমনটি হলে তা শাস্তিযোগ্য।

এদিকে মামলা দুটির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ঢাকার মামলাটি করেছেন একজন রাজনীতিক এবং মানবাধিকার কর্মী। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে মামলা করেছেন আহত সাইফুদ্দীন নিজেই। দুই মামলায় দুটি ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, যা সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।

সাইফুদ্দীন এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, আমি কাউকে হয়রানি করতে মামলা করিনি। সত্য উদঘাটনে তদন্তেই সব প্রমাণ বের হবে।

এর আগে রাজধারীর মোহাম্মদপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তরুণ ব্যবসায়ী রোকন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। একটি মামলা করেন স্থানীয় যুবদলের একজন নেতা। নিহতের পরিবার অন্য আরেকটি মামলা করে। এক ঘটনায় দুটি মামলা হওয়ায় আদালতের আদেশে পরিবারের করা মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/এসএস/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চাঁদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার
ইরান পরমাণু কর্মসূচি চালু করলে আবার হামলা: ট্রাম্প
‘জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ’ প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন
ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় জুলাই গণহত্যার বিচার হতে হবে: মিলন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা