বাঁচার জন্য পরিবারের অগোচরে ভিক্ষা করেন জহুরা

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০২| আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২০, ১৫:১৩
অ- অ+

জহুরা খাতুন। মধ্যবয়সী এই নারী একসময় সকাল হলেই যেতেন স্বামীর নার্সারিতে। গাছের চারার যত্ন করা থেকে শুরু করে নানা কাজে সহযোগিতা করতেন। স্বামী-স্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমে দরিদ্রতা কিছুটা দূর হয়েছিল। সংসারে ফিরেছিল সচ্ছলতা। কিন্তু এখন সকাল হলেই তিনি বাড়ির কাউকে না জানিয়ে বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষা করতে।

পাবনার পৌরশহরের মধ্য শালিকা গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী জহুরা খাতুন বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সচ্ছল স্বজনদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি বারবার। কিন্তু কোথাও থেকে আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছি। ভিক্ষা করতে লজ্জা লাগে। কিন্তু কী করব, উপায় নেই। আমি বাঁচতে চাই। বাড়ির কেউ বাইরে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে জানাই, আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়েছিলাম।’

ভিক্ষা করে যে টাকা পান সেই টাকায় ওষুধ কিনে বাড়ি ফেরেন জহুরা। কারণ নাকের পলিপাস বড় হয়ে সেখানে ক্যানসারের জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। হারাতে হয়েছে বাম চোখ। ফুলে গেছে মুখ। অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে কোনো কার্পণ্য করেননি আবদুর রাজ্জাক। এনজিও থেকে ঋণ করে চিকিৎসা করিয়েছেন। এতে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। পুঁজি হারিয়ে নার্সারি ব্যবসায় ধস নেমেছে। কেমোথেরাপি দিতে গিয়ে বিক্রি করেছেন বিয়ের গহনা। শুধু তাই নয়, সর্বশেষ ছয় শতক জমি ও জীবিকার প্রধান বাহন ভ্যানটিও বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে জহুরা খাতুনের। পারছেন না কেমোথেরাপি দিতে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বছর ছয়েক আগে প্রথমে নাক দিয়ে মাঝে মধ্যে রক্ত পড়ত জহুরার। এরপর পাবনা, নাটোর মিশন হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা থেকে শুরু করে নানা জায়গায় চিকিৎসা করান। কিন্তু রোগ না সারায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি। এরপর রোগ বাড়তে থাকায় স্থানীয় এক ব্যক্তির পরামর্শে জহুরা খাতুনকে নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহ ডেলটা হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে। সেখানে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ এটিএম সাজ্জাদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন জহুরা খাতুন।

চিকিৎসক বলেছেন, ঠিকমতো চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জহুরার। তবে এর জন্য প্রয়োজন প্রায় তিন লাখ টাকা। চিকিৎসকের এমন কথা শুনে ধার-দেনা করে প্রথম কেমোথেরাপি দিয়ে জহুরা খাতুনকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছেন স্বজনরা।

এদিকে স্ত্রীর ভিক্ষা করার কথা শুনে ভেঙে পড়েছেন স্বামী আবদুর রাজ্জাক।

অঝোরে কেঁদে তিনি বলেন, ‘মেয়রের কাছে গিয়েছিলাম সহযোগিতা চাইতে। কিন্তু উনি ৫০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা একটি দরখাস্তে সুপারিশ করে দেন।’

স্ত্রীকে সুস্থ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক।

এ বিষয়ে পৌরশহরের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মির্জা আশরাফুল হক বলেন, ‘জহুরা খাতুন একজন পরিশ্রমী নারী ছিলেন। তার কারণেই তাদের সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরেছিল। কিন্তু তার অসুস্থতার কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তারা। আমরা পাড়া প্রতিবেশীরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। তবে সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে উপকৃত হতো অসহায় পরিবারটি।’

জহুরা খাতুনকে সহযোগিতা করতে তার সঙ্গে এই নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে: ০১৭৬৮-৪৮৯২৭৫ (বিকাশ)

(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাঁচ শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যা, গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত
সিরাজগঞ্জে নদী ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই: চরমোনাই পীর
টঙ্গীতে ঝুট নিয়ে মহাসড়ক রণক্ষেত্র, ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ১০ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা