বিল্ডিংয়ের ‘তলানির ইট’ হতে চাই

একটি বিল্ডিং নির্মাণে হাজার হাজার ইট- বালি-সিমেন্টসহ নানা প্রয়োজনীয় উপকরণ লাগে। শুধু তাই নয়, এটি সুসজ্জিত করতে চুন-কালির পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বিভিন্ন কালারের। এরপর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলে এতে বাসগৃহ বানায় মানুষ। গড়ে তোলে নানা অফিস-আদালত।
হাজারো ইটের মধ্যে কিছু ইট থাকে ছাদে, কিছু থাকে মাঝখানসহ পুরো বিল্ডিংটির ভেতর-বাইরে। আবার কিছু ইটকে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক থাকতে হয় তলানিতে।
ছাদের ইটটি আলো-বাতাসের সঙ্গে অনেক কিছুই উপভোগ করতে পারে। আবার মাঝে মাঝে ঝড়ের মোকাবিলা করতে হয়। তারপরও মোটাদাগে বলা যায় ছাদের ইটগুলো সুখেই থাকে। ঝিরিঝিরি বাতাসের সুখানুভূতি তাদের ভালোই লাগে। এ ইটগুলো নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে? না, পারে না।
কিন্তু তলানির ইটগুলো মাটিচাপা পড়ে থাকলেও নেতৃত্বের তৃপ্তি ঠিকই পায়। আপাত দৃষ্টিতে রোদ-বৃষ্টি আর বাতাসের কোনো সুখানুভূতি বোঝেই না এ ইটগুলো। এমন বাস্তবতায় কেটে যায় যুগের পর যুগ, এমনকি শত বছর।
লাল টুকটুকে ইটগুলো হয়তো কোনোদিন চিন্তাও করে না মাটির নিচে চিপায় চাপায় পড়ে কাটাতে হবে আজীবন। তারপরও বিল্ডিংয়ের স্বার্থে, ভবনটির স্বার্থে মাটির নিচেই চাপা পড়ে থাকতে হয়।
আচ্ছা মাটির নিচে পড়ে থাকা ইটটি যদি দাবি করে আমি জীবনের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে এসে ছাদের উপরে যেতে চাই। আলো-বাতাসের সুখানুভূতি নিতে চাই। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে বিল্ডিংয়ের মালিক যদি মন নরম করেন, নিচ থেকে ইটগুলো তুলে ছাদে নিয়ে আসেন তাহলে কি বিল্ডিংটি টিকবে?
এক কথায় টিকবে না। কোনোমতেই বিল্ডিংটি বাঁচবে না। ভেঙে পড়বেই পড়বে। ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে তলানির ইটগুলোকে শত কষ্ট নিয়ে নিচেই পড়ে থাকতে হয়। এটাই নেতৃত্ব। নেতৃত্বের স্বাদ।
অনুরূপভাবে একটি সংগঠনকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে, শত শত বছর টিকে থাকতে হলে কিছু মানুষকে তলানির ইটের ভূমিকা পালন করতে হয়। তলানি ছাড়া কোনোমতেই ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি টিকবে না। অনেক মানুষ যখন একত্রিত হয় কোনো লক্ষ-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য, তখন তলানির ইটের ভূমিকা পালন করতে হয় নেতৃত্বে থাকা লোকগুলোকে। সংগঠন সংগঠক ও নেতৃত্ব সবার দ্বারা আসা করা যায় না। মান-অভিমান, রাগ-গোস্সা সব কিছুকে বিসর্জন দিয়ে যদি কেউ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন, তখনই নেতৃত্বে আসতে পারেন।
আর নেতৃত্বে আসা মানুষেরাই সম্মানিত হন। তাদের কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকেন আজীবন। নেতৃত্বে থাকা মানুষেরা যদি লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ দূর না করতে পারেন তাহলে তাকে হতে হয় অবাঞ্ছিত। লাঞ্ছিত ও অপমানিত।
পাঙ্খার বাতাস খাবেন, ফুটানি করে ঘুরবেন, নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংগঠন চালাবেন, নিশ্চিত আপনার পদাবনতি হবে। নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়বেন। সামনা-সামনি অনেকেই সুবিধা পেয়ে আপনাকে ভালো বলবে। কিন্তু আড়ালে-আবডালে সুবিধা নেওয়া মানুষই আপনাকে ছুড়ে ফেলবে, কোপ দিবে।
মনে রাখতে হবে আপনার সংগঠনের সব সদস্য একই গুণাবলিসম্পন্ন হবেন না।
সদস্যদের কোয়ান্টিটি (সংখ্যা) আর কোয়ালিটি (গুণাবলি) একরকম না। তবে কোনো কোনো সময় কোয়ালিটির তুলনায় কোয়ান্টিটিও দরকার হয়। যখন আপনি সংগঠনের নেতৃত্বে থাকবেন তখন সবাইকে নিয়েই আপনার চিন্তা করতে হবে। কারণ সবার নেতা আপনি।
সবার জন্য নজরও এক রাখতে হবে। আর এটাই গণতান্ত্রিক সিস্টেম। সবার অধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন না, নিজে ভাব নেবেন। নিজেকে পণ্ডিত ভাববেন। কনফার্ম ঠকবেন। লাঞ্ছিত হবেন সময়ের ব্যবধানে।
চলবে.........
লেখক: সাংবাদিক

মন্তব্য করুন