বন্ধ ও লোকসানি একটিভ ফাইনের শেয়ারদর বৃদ্ধি কারসাজি নয় তো?

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৯ | প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৫

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান একটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের শেয়ার দর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭২ শতাংশ বা ১০.৯০ টাকা। অথচ এটি একটি লোকসানি কোম্পানি। মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। ঠিকভাবে দিতে পারে না লভ্যাংশও। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিস্তর অনিয়ম। তবু কোম্পানিটির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় কারসাজির প্রশ্ন উঠছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

মাস তিনেক আগে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১৫.১০ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ১০.৯০ টাকা বা ৭২ শতাংশ বেড়ে ২৬ টাকা ওঠে এর শেয়ারের দাম। কোম্পানিটির শেয়ারদরের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ডিএসই চিঠি পাঠায়। জবাবে কোম্পানি জানায়, শেয়ারদর বৃদ্ধির কোনো সংবেধনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই।

এ বিষয়ে একটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, পুঁজিবাজারে একটিভ ফাইনের শেয়ারদর যে হারে বাড়ছে, তার সঙ্গে কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থার কোনো মিল নেই। শেয়ারদর বৃদ্ধিরও কোনো কারণ নেই। করোনার কারণে কোম্পানিটির ২০২০-২১ অর্থবছরের নয় মাসই বন্ধ ছিল। বর্তমানেও বন্ধ রয়েছে।

সবশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটি লোকসানের কারণে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। ২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির অবস্থা আরও বেশি খারাপ। এমন অবস্থায় এবারও কোম্পানিটির পক্ষে লভ্যাংশ দেয়া সম্ভব হবে না।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের খরচ কিন্তু হচ্ছে। ব্যবসা বন্ধ থাকায় আমরা অনেক বেশি লোকসানের মুখে পড়ে যাচ্ছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটিভ ফাইনের শেয়ার দর বৃদ্ধির কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। শেয়ার দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো তথ্যও কোম্পানিটির কাছে নেই।’

২০১০ সালে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড সর্বশেষ ২০১৯-২০ হিসাববছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ২৩ পয়সা। এর আগে কোম্পানিটি ২০১৯ সালে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।

কোম্পানিটির সচিব ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে আরও বেশি খারাপের কথা বললেও কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তার উল্টো। ২০২০-২১ অর্থবছরের নয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ১৭ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দেখিয়েছে ২২.০২ টাকা।

তাহলে কি কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন ভুল দেখিয়েছে? আব্বাস নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, একটিভ ফাইনের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্য নয়। কোম্পানিটি ভালো প্রতিবেদন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। এর আগেও কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের কথা শোনা যায়।

ওই বিনিয়োগকারী বলেন, ব্যবসা বন্ধ এবং আগের বছরের তুলনায় এবার আরও বেশি খারাপ ব্যবসা হলে আর্থিক প্রতিবেদনে আয় দেখাচ্ছে কীভাবে। তাহলে কোম্পানিটিরি আর্থিক প্রতিবেদনে নিশ্চয় কোনো গাফলা রয়েছে।

রফিক নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ার পেছনে রয়েছে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে শেয়ার রয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। বিএসইসির নিয়ম ৩০ শতাংশ করতে হবে। ফলে এই শেয়ার কোম্পানিটির মালিকপক্ষকে বাজার থেকে কিনে শর্ত পূরণ করতে হবে। এতে করে কোম্পানিটির শেয়ারের চাহিদা বাড়বে বাজারে।

চাহিদা বাড়লে শেয়ারের দরও বাড়বে। সে কারণেই কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করেন ওই বিনিয়োগকারী।

হারুন নামের এক বিনিয়োগকারী মনে করেন একটিভ ফাইনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। কারণ যে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ, গত বছরও লোকসানে ছিল, এবারও লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে, তারপরও কেন এর শেয়ার দর বাড়ছে!

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের অনিয়মের বিষয়ে জানা যায়, একটিভ ফাইন কেমিক্যালে ২০২০ সালে ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে আপত্তি (কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন) জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষ শফিক বসাক অ্যন্ডি কোং চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস।

আপত্তি হিসেবে নিরীক্ষক জানায়, একটিভ ফাইন কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে নগদ অর্থে স্থায়ী সম্পদ কিনেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানি আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৩০ (এম) লঙ্ঘন করেছে।

এ ছাড়া বিএসইসির ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী, উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। কিন্তু উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের হাতে শেয়ার রয়েছে মাত্র ১২.০৪ শতাংশ।

নিরীক্ষক আরও জানায়, আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-১২ এর প্যারা ১২ ও ১৫ অনুযায়ী, কোম্পানির কারেন্ট ইনকাম ট্যাক্স ও ডেফার্ড ট্যাক্স সঞ্চিতি গঠন করার বিধান রয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মূল ব্যবসার বাইরে অন্যান্য আয়ের ওপর ছাড়া এ ট্যাক্স সঞ্চিতি গঠন করেনি। সংশ্লিষ্ট ব্যবসা ট্যাক্স অব্যাহতির আওতাভুক্তির কারণে এমনটি করা হয়েছে বলে কোম্পানি জানিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এখনো সে বিষয়ে কোনো কাগজপত্র পায়নি।

বর্তমানে কোম্পানিটির ১৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ২৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। ৩০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০। বর্তমানে কোম্পানিটির ওআইসি ব্যতীত রিজার্ভ ১৯৬ কোটি ৩ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে বর্তমানে ১২.০৪ শতাংশ শেযার রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২৯.১০ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩.১১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫৫.৭৫ শতাংশ শেয়ার।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/এসআই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

সোনালী ব্যাংকের শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নৈতিকতা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

সেবা প্রত্যাশী টার্গেট গ্রুপের সঙ্গে বিএইচবিএফসি’র মতবিনিময় সভা

টেকসই অনুশীলনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির হটস্পট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে দেশ: শিল্পমন্ত্রী

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন‌্য নতুন প্রডাক্ট চালু করেছে জনতা ক্যাপিটাল

গ্রামীণফোন এবং টিভিএস অটো বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক

এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন

এনআরবি ব্যাংক এবং এ এম জেড হাসপাতালের মধ্যে চুক্তি 

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ফুটবল টিমের জার্সি উন্মোচন

বে গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি শামসুর রহমান মারা গেছেন

দেশে রিজার্ভ কমে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :