‘সিসা কারাখানার ধোঁয়ায়’ ৪০ টন পেয়ারা নষ্ট

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৫৫
অ- অ+

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের ২ নম্বর স্লুইচ গেট এলাকায় অবৈধ সিসা তৈরি কারাখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বাগানের প্রায় ৪০ টন পেয়ারা নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। বিষাক্ত ওই ধোঁয়ায় এলাকায় কয়েকটি গরুও মারা গেছে বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসির অভিযোগ, উন্মুক্ত স্থানে অবৈধ কারখানার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিলেও প্রসাশনের কর্মকর্তারা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ফলে পরিবেশ ও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ ক্ষতির মুখে পড়ছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রাণীনগর-বান্দাইখাড়া প্রধান সড়কের ২ নম্বর স্লুইচ গেটের পার্শ্বে অবৈধভাবে একটি উন্মুক্ত কারখানা স্থাপন করে পুরাতন ব্যাটারি পুরে সিসা তৈরির কাজ করে আসছে একটি চক্র। বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরাতন ব্যটারি কিনে গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে এসে সন্ধ্যার পর থেকেই সেখানে সারারাত চলে আগুনে পুড়িয়ে সিসা তৈরি কাজ। তবে সকাল হওয়ার আগেই এসব কার্যক্রম শেষ করে চলে যায় চক্রটি। ব্যাটারির আ্যাসিডের বিষাক্ত ধোঁয়া এবং দূর্গন্ধে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে।

অভিযোগ উঠেছে, ওই স্থানের পাশেই প্রায় পাঁচ হাজার বিভিন্ন ফলজ গাছের বাগান রয়েছে। সেখানে বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে এসব বাগানে ফল কালো হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গাছপালার পাতা বির্বণ হয়ে মরে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, কারখানার আশেপাশে স্থানীয়রা গরু চড়াতে এসে ঘাষ খাওয়ার পর ওই এলাকার প্রায় চারটি গরুও মারা গেছে। তবে এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোন ফল হচ্ছে না। এমনকি প্রসাশনের লোকজনও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

বাগান ও প্রজেক্ট মালিক আব্দুল কুদ্দুস মণ্ডল জানান, তার জন্মস্থান রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভাতঘর পাড়া গ্রামে। তিনি ব্যবসা করার জন্য গত দুই বছর আগে এই এলাকায় এসে জমি কিনেন এবং লিজ নিয়ে একই স্থানে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে নয়টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে আসছেন। পাশাপাশি পুকুর পার জুড়ে গড়ে তুলেছেন ফলজ বাগান। তার বাগানে প্রায় সাড়ে ১২০০ থাই পেয়ারা, আড়াইশত আম, একশত বেদেনা, আড়াই হাজার লেবু এবং বেশ কিছু কলা গাছ রয়েছে। এসব গাছে ফল আসতে শুরু করলে ফল বড় না হতেই সিসা তৈরি কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে সবগুলো ফল কালো হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৪০ টনেরও বেশি পেয়ারা নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বেদেনা, আম, কলা, লেবুসহ বিভিন্ন জাতের লাখ লাখ টাকার ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার কারখানার মালিককে বলেও কোনো ফল হয়নি বরে জানান তিনি।

কালিকাপুর গ্রামের শাহাদত হোসেন বলেন, কারখানার পাশে চরে ঘাস খাওয়ার কারণে তার একটি গরুও মারা গেছে। এছাড়া এই এলাকার আরও তিনটি গরু মরে গেছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত ওই কারখানার নির্দিষ্ট মালিকের নাম বা চক্রটির কোনো লোকজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, সিসা তৈরি কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বণ থাকে। ফলে ধোঁয়ার প্রভাবে ফল কালো হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ইতোমধ্যে আমি এই কারখানা বন্ধের জন্য থানার ওসিকে বলেছি।

রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, সিসা তৈরির বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানবদেহের শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ এবং ক্যানসারসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া পশু-পাখি এবং গাছপালার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, সিসা তৈরি কারখানা বন্ধে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সংবিধান বানায় শাসকরা আর গঠনতন্ত্র বানায় জনগণ: ফরহাদ মজহার
আরাকান করিডর- ঐতিহাসিক সুযোগ ও কঠিন ঝুঁকি
রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সবাই একমত হবেন, আশা আলী রীয়াজের
দেশে উটের দুধ বিক্রি করবেন মিষ্টি জান্নাত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা