বিএনপিতে ইমাম পরিবর্তন কেন চেয়েছিলেন জিএম সিরাজ এমপি?

ওয়ান ইলেভেনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দলের অভ্যন্তরে ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেন। তার ওই প্রস্তাবে দলের সাবেক মন্ত্রী-সাংসদরা সমর্থন দেন, যারা সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ার একাধিকবারের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ) ছিলেন সেই সংস্কারপন্থিদের মধ্যে অন্যতম। মান্নান ভুঁইয়ার বাড়িতে প্রকাশ্য বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন তিনি।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সংস্থারপন্থীদের অনেককে দলে সক্রিয় করে বিএনপি। যারা ফিরেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন বগুড়ার সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ। সদর আসনের সংসদের পাশাপাশি তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়কও হয়েছেন।
কী বলেছিলেন জিএম সিরাজ?
এক দশক আগে আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের সময় ‘মাইনাস টু ফর্মুলার’ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছিলেন জিএম সিরাজ। সেসময় বিএনপির নেতৃত্ব বদলের দাবি নিয়ে তার বক্তব্য ছিল, ‘মসজিদ ভাঙতে নয়, আমরা চাই ইমাম বদলাতে।’ অবশ্য তিনিই এখন বগুড়া থেকে উপনির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে জেলার বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সিরাজ বগুড়া সদর এলাকার বাসিন্দা নন। বাড়ি শেরপুর উপজেলায়। ২০০১ সালে শেরপুর-ধুনট আসন থেকে ভোটে জেতেন তিনি।
অভিযোগ আছে, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেই দলে সংস্কারের এই দাবিটি সামনে আনা হয়। এ ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিলো অনেক।
পরে ২০০৭ সালে সংস্কারপন্থীদের নিয়ে যখন সমালোচনা তুঙ্গে তখন গ্রেপ্তারের আগে খালেদা জিয়া সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে বহিষ্কার করেন।
যেভাবে দলে ফেরেন সিরাজ?
নানা সময় ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থী নেতাদের সক্রিয় করার চিন্তা ছিল বিএনপিতে। সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজনকে দলে ফেরানো হয়। অবশ্য তাদের বেশিরভাগেরই নেই কোনো পদ-পদবি। ফলে দলের কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করলেও এসব নেতার সাংগঠনিক পরিচয়হীনতায় কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়।
২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর সংস্কারপন্থী ১৪ নেতাকে বিএনপিতে সক্রিয় করা হয়। এর আগে ও পরে আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। বগুড়ার সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ) তাদের মধ্যে অন্যতম।
যদিও ২০০৮ সালে টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন জিএম সিরাজসহ সংস্কারপন্থিরা। এমন বক্তব্য দেয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতে তিনি সাইড লাইনে চলে গিয়েছিলেন । পরবর্তিতে মন দেন নিজের ব্যবসায়। তিনি এসআর গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। কিন্তু এরমধ্যেও আবার ফিরে আসেন বিএনপির মূল স্রোতে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ছেড়ে দেওয়া আসনে নাটকীয়ভাবে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
যদিও জেলা বিএনপির পদ পাওয়ার পর তাকে শুরুতে বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে অল্পসময়ের মধ্যে সে বিদ্রোহ থেমে যায়।
দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে এক যুগ আগের দেওয়া বক্তব্য অবশ্য অস্বীকারও করছেন না বিএনপিতে ফেরা এই নেতা। তার দাবি, একটি অবস্থার প্রেক্ষিতে এমনটা বলেছিলেন। তবে তার দলের প্রতি আনুগত্যের কমতি ছিল না।
ঢাকা টাইমসকে জি এম সিরাজ বলেন, ‘ঈমাম পরিবর্তনের বিষয়টি আগে পরের কথার মাঝখান দিয়ে উঠে আসছিল। তবে তখন খুব আন্ডারপ্রেশারে ছিলাম।'
জি এম সিরাজ এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। সবশেষ তিনি বগুড়া- ৬ আসন থেকে বিজয়ী হন।
ঢাকাটাইমস/১ফেব্রুয়ারি/বিইউ/এমআর

মন্তব্য করুন