মহানবী (সা.)–কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, কূটনৈতিক সংকটে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ জুন ২০২২, ১৮:০২| আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১৯:১৪
অ- অ+

সম্প্রতি ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সেটা তার সহযোগী এবং বিজেপির দিল্লি শাখার মিডিয়া প্রধান নভিন কুমার জিন্দাল টুইটারে শেয়ার করেন। এরপর ভারত থেকে উত্তেজনা শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত তা পুরো আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার পর এ দুই ব্যক্তিকে দল থেকে বহিষ্কারও করে বিজেপি। কিন্তু এতে ক্ষান্ত হয়নি আরব বিশ্ব। কাতার সরকার ইতোমধ্যেই ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বিবৃতি দিয়েছে। কাতারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারতের কড়া সমালোচনা করেছে সৌদি আরবও। এ নিয়ে এখন মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক টানাপোড়েন প্রকট হচ্ছে।

উপসাগরীয় দেশ কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইনের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মালদ্বীপ, জর্ডান, লিবিয়াও ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে।

কুয়েতের বাজারে ভারতীয় পণ্য বর্জন করা হয়েছে। কাতারের পাশাপাশি ইরান এবং কুয়েত ওই ঘটনায় নিন্দা জানাতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় এবং এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সঙ্গে নয়া দিল্লির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় ভারতীয় কূটনীতিকরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও ঝড়ের যে আরও অনেকখানি বাকি তা টের পাওয়া যাচ্ছে।

সমালোচকরা বলছেন, তাদের এমন মন্তব্য ভারতে বিদ্যমান তীব্র ধর্মীয় বিভাজনেরই প্রতিফলন। গত কয়েক বছর ধরেই দেশটিতে এই ভিবাজন চলে আসছে। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও আক্রমণ তীব্রভাবে বেড়েছে।

তাদের বষ্কিারের পর এক বিবৃতিতে বিজেপি বলেছে, বিজেপি যেকোনো ধর্মের যেকোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে অপমানের কঠোর নিন্দা জানায়। কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মকে অপমান বা হেয় করে- এমন যেকোনো আদর্শের বিরুদ্ধেও বিজেপি। বিজেপি এ ধরণের মানুষ কিংবা দর্শনকে সমর্থন করে না।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গেছে তাতে বিজেপির নেওয়া এ পদক্ষেপ হয়ত যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে না।

ঘটনার জন্য ভারতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছিল, এই ধরনের ইসলামফোবিক মন্তব্যের পরেও অপরাধীদের কোনো শাস্তি না দেওয়ায় মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য গুরুতর বিপদ তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে কুসংস্কার এবং প্রান্তিকতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে সহিংসতা ও ঘৃণার চক্র সৃষ্টি হবে।

সৌদি আরবও তাদের বিবৃতিতে কড়া শব্দ ব্যবহার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বিজেপির মুখপাত্রের বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছে তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কূটনীতিকদের মুখ খুলতে হচ্ছে।

কাতারের ভারতের রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তাল বলেছেন, টুইটগুলি কোনোভাবেই ভারত সরকারের মতামতকে প্রতিফলিত করে না। এগুলি প্রান্তিক মতামত। বিজেপির সিনিয়র নেতা এবং অন্যান্য কূটনীতিকরাও বিতর্কিত সেই বক্তব্যের নিন্দা করেছেন।

৫৭ সদস্যের সংগঠন ওআইসি এবং পাকিস্তানও ভারতের সমালোচনা করেছে। কিন্তু দিল্লি তাদের সমালোচনাকে উড়িযে দিয়ে বলেছে, তাদের মন্তব্য ‘অবাঞ্ছিত ও সংকীর্ণচিত্তের’।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি এখন এতটাই গভীর হয়েছে যে এখন বিজেপি ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়াও লাগতে পারে। তা না হলে আরব বিশ্ব ও ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

কেমন সংকট হতে পারে ভারতের

জিসিসি সদস্যভুক্ত দেশ কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান এবং ইউএইর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। ২০২০-২০২১ সালে জিসিসির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এমনকি এসব দেশে লাখ লাখ ভারতীয় প্রবাসী রয়েছে যারা বছরে কোটি কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠায় দেশে। এসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি আমদানিও করে ভারত।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নিয়মিত সফর করেছেন উপসাগরীয় অঞ্চলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও সই করেছে ভারত। ব্যাপক বাণিজ্য চুক্তির জন্য জিসিসির সঙ্গে তাদের আলাপও চলছে।

২০১৮ সালে আবুধাবিতে প্রথম হিন্দু মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ভারতের বিরুদ্ধে আরব আমিরাতের অবস্থান নয়া দিল্লির জন্য খুবই দুশ্চিন্তার। গত কয়েক বছরে আরব আমিরাতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। দেশটি বহুজাতিক বিভিন্ন ফোরামে ভারতকে সমর্থনও করেছে।

তাই এ বিতর্ক আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সাফল্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের ভারত সফরের কথা ছিল। এর মধ্যে এই বিতর্ক এই সফরেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আরব বিশ্বে কাজ করা ভারতের প্রাক্তন কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়াত বলেছেন, ভারত এখন জটিল পরিস্থিতিতে আছে। কেবল নেতৃত্ব পর্যায়ে আন্তরিক প্রচেষ্টাই ভারতের নেতিবাচক পতন রোধ করতে পারে।

এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ভারতকে যে কূটনৈতিক মূল্য দিতে হবে, তাতে উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের স্বার্থের বিশাল ক্ষতি করতে পারে বলেও মনে করছেন অন্য কূটনীতিকরা।

(ঢাকাটাইমস/৭জুন/এসএটি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আ.লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সুমন করিম গ্রেপ্তার
এনআরবি ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হলেন কামরুল ইসলাম      
ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্যাশ অফিসারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ২৪ বছর পূর্তি উদযাপন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা