এরশাদ শিকদারের মেয়ের আত্মহত্যা: কোন পর্যায়ে তদন্ত জানে না পরিবার

খুলনার বহুল আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ফাঁসি হওয়া এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরীন এশার আত্মহত্যার ঘটনায় এখনও অনেক ফরেনসিক প্রতিবেদন পায়নি পুলিশ। ফলে সহসা এ আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় অভিযোগপত্র অথবা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে না পুলিশ।
মৃত এশাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তার প্রেমিক প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে করা মামলায় ইতোমধ্যে তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে এশার মায়ের অভিযোগ, পুলিশ তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। তাই এ মামলার বর্তমান অবস্থা কী সেটা জানেন না তিনি।
গুলশান থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আসামি প্লাবন ঘোষ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এশার। সেই প্রেম থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে প্লাবন ঘোষ তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপরই এশা প্লাবন ঘোষকে ভিডিও কলে রেখে বাসার বেড রুমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
পুলিশের ওই সূত্রটি বলছে, এশার বাসা থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোন ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তদন্ত করার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, এই আত্মহত্যায় প্লাবন ঘোষের প্ররোচনা রয়েছে। এশার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশ হাতে পেয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এশার দুই হাতে ব্লেড দিয়ে কাটা জখমের চিহ্ন রয়েছে। তবে তার মৃত্যুর আত্মহত্যাজনিত কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত নিয়ে সিআইডির পর্যবেক্ষণের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া ভিকটিম ও আসামির ডিএনএ (ডি-অক্সি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) নমুনা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টও এ মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আমরা এসব রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট হাতে পেলেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
চলতি বছরের ৩ মার্চ রাতে গুলশানের শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজরভ্যালির একটি ফ্ল্যাটে প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন এশা। পরদিন ভোরে গুলশান থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ওইদিন এশার মা এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার শোভা গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলায় এশার প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকেই প্লাবন পলাতক বলে দাবি করছে গুলশান থানা পুলিশ।
এশার মা সানজিদা নাহার শোভা বলেন, ‘বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিকের ছেলে প্লাবন ঘোষ। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সন্তান হওয়ায় পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবেই প্লাবনকে গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশ চাইলেই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারত। পুলিশের গড়িমসির কারণে প্লাবন ঘোষ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ মামলার অনেক আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। কিন্তু অনেক পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও পাইনি। এসব প্রতিবেদন পেলে দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন জমা দেব। বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করা হবে না।
জান্নাতুল নওরীন এশা ঢাকার সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। তিনি রাজধানীর শাহজাদপুরে সুবাস্তু টাওয়ারে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। পড়াশোনা অবস্থায় আট মাস আগে প্লাবনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন এশা। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই ছেলে ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যে সমস্যা চলছিল। এসব নিয়ে প্লাবনের সঙ্গে এশার প্রায়ই ঝগড়া হতো।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে খুলনার এরশাদ শিকদার গ্রেপ্তার হওয়ার চার-পাঁচ মাস পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার শোভার গর্ভে এশা জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এরশাদ শিকদারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা নাহার শোভা। শোভা খুলনার মেয়ে। তিনি ছিলেন একজন আইনজীবীর স্ত্রী। পরকীয়ায় জড়িয়ে এরশাদ শিকদারকে বিয়ে করেন। এরশাদের ফাঁসির পর শোভাকে এরশাদ শিকদারের বাড়ি স্বর্ণকমল থেকে বের করে দেন প্রথম স্ত্রী ও অন্যরা। এরপর তিনি খুলনায় কিছু দিন পার্লারের ব্যবসা করেন। তারপর চলে আসেন ঢাকায়। অন্যদিকে এরশাদ শিকদারের প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগমের তিন সন্তান রয়েছে। তারাই বর্তমানে এরশাদ শিকদারের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভোগ দখল করছেন।
এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। ফলে এ মামলা নিয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ (ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/এএ/এফএ)

মন্তব্য করুন