মাছ বাজারে রঙিন লাইট: ‘জ্বালাইয়া বাত্তি করে ডাকাতি’

রাধারমণ দত্ত কত কত বছর আগেই লিখে গেছেন—‘বাজারিরা বাজার করে কত্ত রঙের বাত্তি জ্বলে...দোকানের সামনে/তারা জ্বালাইয়া বাত্তি করে ডাকাতি...।’ দেশের নগর-মহানগর, শহরের হাঁটে বাজারে এই ‘বাত্তি’ জ্বালিয়ে ক্রেতার সঙ্গে ঠগবাজির দেখা মিলবেই। বিশেষ করে মাছের বাজারে।
রাজধানীর বাজারে ব্যবসায়ীরা মাছের ডালার ওপর রঙিন লাইট ব্যবহার করে এভাবেই ক্রেতাদের প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিচ্ছেন। এসব রঙিন লাইটের আলোর ঝলকানিতে বিভিন্ন জাতের মাছকে তাৎক্ষণিক দেখে তাজা মনে হয়। তবে বাসায় গিয়ে দেখা যায় বাজারে যেমন দেখেছেন ঠিক তেমন নয়।
বুধবার সরেজমিনে কারওয়ান বাজার, রামপুরা বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বাজারে দিনে হলুদ লাইট আর রাতে বিভিন্ন রঙের লাইট ব্যবহার করছে মাছ বিক্রেতারা।
মাছ ক্রেতারা বলছেন, দুইদিন বা এক সপ্তাহ আগের ফ্রিজের মরা মাছ বা পঁচা মাছ বিক্রির জন্য এসব বিভিন্ন রঙিন লাইট ব্যবহার করা হয়। রঙিন লাইট ব্যবহারের কারণ হলো মাছকে দেখতে সতেজ ও তাজা মনে হয়। এ-জন্য বার বার প্রতারণার শিকার হতে হয় ক্রেতাদের।
তবে মাছ বিক্রেতারা প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, বাসি মাছকে তাজা দেখানোর জন্য নয়, বরং মাছের ওপর রঙিন বাল্বের আলো দেখতে সুন্দর লাগে তাই এসব বাল্ব ব্যবহার করেন।
কারওয়ান বাজারের মাছ কিনতে এসেছেন জাকির হোসেন। তিনি অভিযোগ করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, আজকের মাছ বলে কয়েকদিন আগের মাছ বিক্রি করে ফেলেন ব্যবসায়ীরা। এর জন্য তারা হলুদ লাইট ব্যবহার করেন। হলুদ লাইট ব্যবহার করলে মাছকে দেখতে তরতাজা লাগে। তখনই মানুষ ধোঁকা খায়।
রামপুরা বাজারের মাছ কিনতে আসা বিলাল মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, দিনে হলুদ লাইট আর রাতে বিভিন্ন রঙের লাইট ব্যবহার করছেন মাছ বিক্রেতারা। ফলে মাছ ভালো, না খারাপ বুঝতে কষ্ট হয়।
একই সুরে কথা বলেন হাতিরপুল বাজারের মাছ ক্রেতা মো. ইমন আহমেদ। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, রঙিন লাইটের কারণে তাজা মাছ ভেবে আমার মতো শত শত ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছি।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. ইদ্রিস মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা কোনো ধরনের পচা মাছ বিক্রি করি না। আমরা রঙিনের মধ্যে হলুদ লাইট ব্যবহার করি। তবে হলুদ লাইট ব্যবহার করলে মরা আর তাজা মাছ বুঝা যায় না ব্যাপারটা এমন না। মরা ও তাজা মাছের পার্থক্য করা যায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা রঙিন লাইট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে সাধারণ মানুষ নতুন করে আর প্রতারণার শিকার না হয়।
তিনি আরও বলেন, মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো রঙিন লাইট ব্যবহার না করার। আর যেকোনো বাজারে রঙিন লাইট দেখলে মানুষ যেন আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়।
(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/পিআর/ইএস/ডিএম)

মন্তব্য করুন