ময়মনসিংহে হিজড়াদের প্রথম মসজিদ স্থাপন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫০ | প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৪

ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁষা সরকারি জমিতে হিজড়াদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ। সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায়সহ ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো। তাদের উদ্যোগ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।

নগরীর ৩৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর কালীবাড়ী ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসবাস হিজড়াদের। সরকারের ৩৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করেন ৪০ হিজড়া। গত ২৬ জানুয়ারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই তাদের জন্য ৩৩ শতাংশ জায়গায় মসজিদ কবরস্থান নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উন্মে সালমা তানজিয়া।

পরে তারা নিজেদের শ্রম অর্থে স্থাপন করেন টিনশেড মসজিদ মসজিদের পুরো কাজ এখনও সম্পন্ন না হলেও রোজার তিন দিন আগে উদ্বোধন করা হয়। নিয়মিত নামাজ, তারাবি ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণের জন্য হিজড়াদের পাশাপাশি মসজিদে আসছেন স্থানীয় মুসল্লিরাও।

হিজড়াদের সংগঠনের সেতুবন্ধন কল্যাণ সংঘের সভাপতি জয়িতা তনু বলেন, নিজেদের নির্মিত মসজিদ ধর্মীয় শিক্ষাসহ নামাজ আদায় করবো এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। কারণ সাধারণ মসজিদে আমাদের নামাজ আদায় করতে দেওয়া হয় না মসজিদের জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিভাগীয় কমিশনার। এছাড়াও হিজড়া কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছি মসজিদে জামাতে পাঁচ লাইনে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষ নামাজ আদায় করে। তারাবি নামাজের পর আমরা হুজুরের নিকট আরবি শিক্ষা নিয়ে থাকি। মসজিদের নাম দিয়েছি চর কালীবাড়ি আশ্রয়ণ জামে মসজিদ। মুফতি আবদুর রহমান আজাদ বলেন, দেশে এমন মসজিদ প্রথম। মসজিদের ইমাম আবদুল মোতালেব বলেন, আমরা সবাই আল্লাহর সৃষ্টি হিজড়ারা খুব আন্তরিক, এলাকাবাসীও তাদের পছন্দ করে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, হিজড়াদের আচার আচরণে অনেকে বিরক্ত হন। কিন্তু অনেকদিন ধরে আমাদের এখানে বসবাসকারী হিজড়াদের আচার আচরণে এমনটি লক্ষ্য করা যায়নি তাদের নির্মিত মসজিদে নামাজ আদায় করেছি। ধর্মের প্রতি তাদের এমন আগ্রহ প্রশংসার দাবি রাখে। ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, হিজড়াদের মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে অবগত আছি। আমরা এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করবো।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস বলেন, হিজড়াদের সঙ্গে স্থানীয়দের খুব একটা মেলবন্ধন ছিল না। তাই তারা মসজিদ নির্মাণে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর বেশ কয়েকবার আবেদন করেন। যেহেতু আশ্রয়ণের পাশে খালি জায়গা ছিল সেহেতু বিভাগীয় কমিশনার স্যার নিজে গিয়ে স্থানীয় লোকজন নিয়ে ভিত্তি উদ্বোধন করায় বিষয়টিকে সবাই ভালোভাবে নিয়েছেন। আমরাও চাই সেখানে যেন সম্প্রীতি বজায় রেখে চলে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উন্মে সালমা তানজিনা বলেন, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষ প্রথমে আমার কাছে আসে তাদেরকে স্থানীয়রা মসজিদে নামাজ পড়তে দেয় না এমন অভিযোগ নিয়ে। তারা চাচ্ছিল তাদেরকে যেন মসজিদ নির্মাণে জায়গা দেওয়া হয়। যেহেতু খাস জায়গা রয়েছে তাই সেখানে নিজে গিয়ে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। মসজিদ নির্মাণে একজন দুই লাখ টাকা দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করেন, তা দিয়ে টিনশেড মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাসহ ইমামদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণে কাজটি সহজেই সম্পন্ন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :