‘হাসিনার স্বার্থে বিডিআর সদস্যদের কোরবানি দেওয়া হয়েছে: সাংবাদিক শহিদুল

বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম বলেছেন, ‘নিপীড়ক সরকার তার ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমাদের দেশের ক্ষতি করে পার্শ্ববর্তী দেশকে সুযোগ দেওয়ার জন্য, প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করতে ও আমাদের দেশের বলিষ্ঠ সেনাবাহিনী-বিডিআরকে দুর্বল করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সরকার নিজের স্বার্থে বিডিআরের নির্দোষ সদস্যদের কোরবানি দিয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কারা নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের আয়োজনে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় পুনঃতদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপনে (ঙ) নম্বর ধারা বাতিল ও সুষ্ঠু বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
পিলখানা হত্যা মামলায় গঠিত কমিশনের প্রজ্ঞাপনের (ঙ) নম্বরে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধে ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তগণের দায়/অপরাধ অক্ষুণ্ন রেখে যাদের সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমন প্রকৃত অপরাধীদেরকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি এই ধারার মাধ্যমে যারা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছে তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে। কারণ কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যরা নিরপরাধ ও নির্দোষ হওয়ার পরেও তারা কারা নির্যাতিত হচ্ছেন। এই ধারা থাকলে কমিশন কখনোই সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারবে না।
শহিদুল আলম বলেন, ‘আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় নিয়মিত বিডিআর সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বিষয়টা যখন আমার পরিবার ও বন্ধুরা জানতে পারে, আমাকে তারা নিষেধ করেছে। তারা বলল, এটা জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। বিডিআর সদস্যদের সাক্ষাতের অনেক নোট আমার কাছে আছে। সেই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতেই আমি কথা বলছি।’
তিনি বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাপস, তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জড়িত ছিল। এটা ঠিক, এখন এটা বলতে পারছি, ৫ আগস্টের আগে সেই সুযোগ ছিল না।’
শহিদুল বলেন, ‘কারাগারে আমার অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেকের নাম আমি বলতে পারব। ছোট করে যদি বলি হবিগঞ্জের বিডিআর সদস্য রিয়াজ হোসেন চৌধুরী। সে মামলার ৩১২ নম্বর আসামি। তিনি মেজর শফিকুল ইসলামের বডিগার্ড ছিলেন। বিদ্রোহের সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শফিকুল ইসলামের স্ত্রী তাকে পালাতে সহযোগিতা করে। যাতে তিনি নিরাপদে বের হতে পারেন। শুধু রিয়াজ না তাদের মতো শত শত বিডিআর সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। এই সকল নিরীহ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মিথ্যা মামলায় কারা নির্যাতিত এই সাংবাদিক বলেন, ‘এই সকল নিরীহ মানুষকে নিপীড়ক সরকার নিজের স্বার্থে কোরবানির খাসি বানিয়েছে। তাদের বলি দেওয়া হয়েছে। এখন যেভাবে চলছে সেটি যদি চলতে থাকে তাহলে কোরবানির খাসিদের রক্ষা করতে পারব না। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে এই সকল ভাই-বোনদের প্রতি, যারা আমাদের রক্ষায় জীবন ঝুঁকি নিয়েছে। এখন সময় এসেছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আরও কিছু বিষয় বলতে চাই, এটা তো পরিষ্কার। কারা এসেছিল, কারা এই হত্যায় জড়িত, সবই আমাদের জানা রয়েছে। তারপরে আজকে যখন আমরা একটা স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আছি, যখন আমরা স্বৈরাচারকে হটিয়েছি, যখন আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষার সরকারকে পেয়েছি, তখন এই পরিস্থিতিতে মুশতাক আহমেদ মারা গেছে। এতোগুলো মানুষকে যারা অত্যাচার করেছে, যে ভাই-বোনেরা নির্দোষ তাদের প্রতি এই অত্যাচার করা হচ্ছে এটা কী করে সহ্য করব। আমি নিজে ভুক্তভোগী, কীভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে। কীভাবে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। কীভাবে আদালতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিচারক নিজেই বলেছে মামলায় যে কথা বলা হয়েছে একটারও কোনো প্রমাণ নেই।’
শহিদুল বলেন, ‘বিডিআরের ক্ষেত্রে যা যা বলা হয়েছে তার একটারও কোনো প্রমাণ নেই। অথচ সেই ভয়টা ছিল, সে কারণে কেউ কথা বলতে পারেনি। কী কারণে বাইরের গাড়ি সেখানে প্রবেশ করে। কী কারণে অ্যাম্বুলেন্স আসে। কাদের সুযোগ দেওয়া হয়। রহস্যজনক কারণে কাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কী কারণে আটক করা হয়। কাউকে কাউকে খুন করা হয় যাতে সত্য তথ্য বের হয়ে না আসে, সেই বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কার। তারপরও আমরা এই অন্যায়টা হতে দিতে পারি না। আমরা চাই সুবিচার। আমরা অবশ্যই চাই নতুন কমিশন প্রকৃত তদন্ত করে নির্দোষ যাদের এখনো জেলে রাখা হয়েছে, যাদের যৌবন চলে গেছে, মা-বাবা মারা গেছে, স্ত্রী চলে গেছে, মারা গেছে, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার আশা করি।’
(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/এসএস/এজে)

মন্তব্য করুন