ইরান যে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ জুন ২০২৫, ০৯:৫৪| আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১১:৪৪
অ- অ+

ইরানের মিসাইল হামলায় তছনছ হয়ে গেছে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল। ইরানের মিসাইলগুলো বৃষ্টির মতো আঘাত হানে ইসরায়েলের হাইফা, তেল আবিব, বাত ইয়াম, জেরুজালেমসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাইপার তেল শোধনাগার, রেহোভতে অবস্থিত উইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু প্রতিষ্ঠান। অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল গতকাল সকাল থেকে কয়েক দফায় ইরানের ওপর বিমান হামলা চালায়। একটি হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার সময় ইসরায়েলের ১০টি যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে তেহরান জানিয়েছে। এদিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালানো হলে’ ইরানকে লন্ডভন্ড করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে শান্তি ও সম্ভাবনার কথাও বলেছেন তিনি। উত্তেজনা কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্য মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান পাঠানো শুরু করেছে। সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি, এএফপি।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধসে পড়ছে ইসরায়েলের আত্মবিশ্বাস। শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে টানা মিসাইল হামলায় কেঁপে উঠেছে হাইফা, তেল আবিব, বাত ইয়াম, জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো। এসব হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত এবং সহস্রাধিক আহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, একের পর এক বিস্ফোরণে ইসরায়েলের বাত ইয়াম শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিচার মন্ত্রণালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গতকালও কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সূত্র থেকে জানানো হয়, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়ামে গতকাল দিনভর উদ্ধারকাজ চলেছে। আরেক খবরে বলা হয়, ইরানের সর্বশেষ এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে দ্রুতগতির মিসাইল ও ড্রোন। মিসাইল হামলায় মধ্য ইসরায়েলের রেহোবতের ‘ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’-এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানি হামলায় পাবলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়টির ল্যাবরেটরিতে আগুন ধরে যায়। এ ছাড়া তছনছ হয়ে গেছে ইসরায়েলের কয়েকটি শহর। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার তেল শোধনাগার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘বাজান’ জানিয়েছে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার তেল শোধনাগার বিধ্বস্ত হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, ইরানের রাতভর হামলায় তেল শোধনাগার কমপ্লেক্সের ভিতরে পাইপলাইন ও সঞ্চালন লাইনের নির্দিষ্ট জায়গাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তেল শোধনাগারটির কিছু ইউনিট ও স্থাপনা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ক্ষতির প্রভাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানি বাহিনী রাতভর ইসরায়েলের দিকে প্রায় ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪০টি পড়েছে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে। এই অঞ্চলেই হাইফা অবস্থিত।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে ইরান। সর্বশেষ হামলায় ইহুদিবাদী ভূখণ্ডটির বিভিন্ন শহরের স্থাপনা লক্ষ্য করে ‘হাজ কাসেম’ নামের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ইরানি বাহিনী।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘ফার্স’-এর মতে, শনিবার রাতভর একের পর এক হামলার সময় ইসরায়েলে হাজ কাসেম গাইডেড ব্যালিস্টিক মিসাইল আঘাত হেনেছে।

নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন সামরিক বাহিনীর টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড ডিফেন্স বা থাডের মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ ইসরায়েল কর্তৃক ব্যবহৃত অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থার মতে, মে মাসের প্রথম দিকে ইরান এই ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচিত করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র শক্ত জ্বালানিতে সজ্জিত, এর পাল্লা ১২০০ কিলোমিটার। একটি কৌশলগত ওয়ারহেড দিয়ে সজ্জিত এই যুদ্ধাস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারে।

হাজ কাসেম নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত যা এটিকে লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত করতে এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, আয়রন ডোম এবং অন্যান্য ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাধারণত স্বল্প ও মধ্য-পাল্লার রকেট প্রতিহত করতে পারলেও, হাইপারসনিক গতির কোনো অস্ত্র ঠেকানো তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বাইরে। হাইপারসনিক প্রযুক্তির এই ক্ষেপণাস্ত্র এখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নতুন এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে এক ধরনের উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে, যা এটিকে লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধযানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করা হয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কর্পসের বিশেষ অপারেশন ইউনিট কুদস বাহিনীর সাবেক কমান্ডার শহীদ কাসেম সোলাইমানির নামে, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর হামলায় নিহত হন।

উল্লেখ্য, বিশ্ব সামরিক শক্তি সূচক অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে বিশ্বের ১৪তম সামরিক শক্তিধর দেশ। দেশটির সক্রিয় সেনা সদস্য প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার। বিমানবাহিনীর রয়েছে ৫৫১টি যুদ্ধবিমান, স্থলবাহিনীতে প্রায় ১ হাজার ৯৯৬টি ট্যাংক ও ৬৫ হাজারের বেশি সাঁজোয়া যান। নৌবাহিনীর অধীনে ৩৭টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ৭টি সাবমেরিন।

(ঢাকাটাইমস/১৬ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ইসিকে জানানোর জন্য সরকারের প্রতি সালাহউদ্দিনের দাবি
এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধ আইন
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠক 
বাংলাদেশের গুমবিরোধী পদক্ষেপের প্রশংসা জাতিসংঘের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা