ঝিনাইদহে ৪৩৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

ঝিনাইদহে প্রায় ৫০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়া। জেলার ৯০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যে মাত্র ৪৬৯টিতে প্রধান শিক্ষক আছেন, আর বাকি ৪৩৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য। এছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ১৭৮টি। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা উভয়ই চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব শূন্য পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ৯০৭টি সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের জন্য প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ৯০৫টি। এর মধ্যে শুধু ৪টি বিদ্যালয়ে এখনো প্রধান শিক্ষকের পদ অনুমোদন হয়নি। বাকি সব অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৪৬৯ জন প্রধান শিক্ষক। বাকি ৪৩৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চলছে।
জেলার ৯০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এর মধ্যে ছাত্রী ৯৫ হাজার ৭১৩ জন। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মিলে কর্মরত আছেন ৫ হাজার ২৩৫ জন শিক্ষক।
সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৪ হাজার ৯৭৫টি, যার মধ্যে এখন শূন্য রয়েছে ১৭৮টি পদ। এ ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ৩৫টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (এইউইও) পদ রয়েছে। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৩০ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। ওই ৫টি পদ তিন বছরের বেশি সময় ধরে শূন্য রয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক তথ্য নিয়ে জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ১৮১টি পদের মধ্যে ১০৩টি, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১৩৫টির মধ্যে ৬০টি, সদর উপজেলায় ২১৫টির মধ্যে ১১৭টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫০টির মধ্যে ৭৫টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৭৪টির মধ্যে ৩৮টি ও মহেশপুর উপজেলায় ১৫২টির মধ্যে ৪৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
জেলার সদর, হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকূপার অন্তত ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে একসঙ্গে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের। বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে অনেককে বেশ বেগ পোহাতে হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়গুলো অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় সমস্যা হচ্ছে।
সদর উপজেলার সাগান্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অফিসের কাজে আমি বাইরে গেলে অন্য শিক্ষকদের ক্লাসের দায়িত্ব দিয়ে যাই। এতে করে প্রতিনিয়ত ঝামেলায় পড়তে হয় আমাদের। শিক্ষার্থীদের যথাযথ সময় আমরা দিতে পারি না। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়।’
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহী মো. ইমরান বলেন, ‘সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। গেল ১০ বছর ধরে শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়টি আটকে রয়েছে। এসব কারণে শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
জেলার ৪৩৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ১৭৮টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার কথা নিশ্চিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলো খুব দ্রুতই পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। অনলাইনে বদলি প্রক্রিয়া চলছে, তাই শূন্য পদগুলো নিয়োগের মাধ্যমে খুব দ্রুত পূরণ হবে বলে আশা করছি।’
(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন