হারুনের ১০০ বিঘা জমি ও বাড়ি-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

বহুল সমালোচিত ও বিতর্কিত সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, ৫টি বাড়ি ও ২টি ফ্ল্যাট জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে সাবেক এই ডিআইজির ভাই শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানান, দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন আলাদা দুটি আবেদনে হারুন ও তার ভাইয়ের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। আদালত শুনানি নিয়ে আজ আদেশ দেন।
জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে- হারুনের নামে ঢাকার উত্তরায় ৭.৪৫ কাঠা জমিতে ৩ কোটি টাকার মূল্যের একটি ইমারত, গুলশানে ১০.৩৬ শতক জমিতে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ইমারত, কুড়িলে সেমিপাকা একটি টিনশেড বাড়ি, খিলক্ষেতে ১ তলা একটি দালান ও সেমিপাকা আরেকটি টিনের বাড়ি, উত্তরায় ১০ নম্বর সেক্টরে ৭ তলা ভবনে দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাট, জোয়ার সাহারায় ৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আরেকটি ফ্ল্যাট, আশিয়ান সিটিতে ৫ কাঠার একটি প্লট।
কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার ও নারায়ণগঞ্জে ৯৯ দশমিক ১৮ বিঘা জমি জব্দ করা হয়। এর মধ্যে শুধু কিশোরগঞ্জেই হারুনের নামে ৯১.৩২ বিঘা জমি রয়েছে।
হারুনের ভাই শাহারিয়ারের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ৩০ বিঘা জমি জব্দ ও ১১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। শাহারিয়ারের তিনটি কোম্পানির শেয়ারও অবরুদ্ধ করা হয়।
হারুনের অবরুদ্ধ ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে জমা রয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
ডিবি হারুনের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আবেদনে বলা হয়, ‘আসামি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রাখার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তদন্তকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, আসামি তার মালিকানাধীন ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। যা করতে পারলে এ মামলা আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে স্থাবর সম্পত্তিগুলো জব্দ ও অস্থাবর সম্পত্তিগুলো অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।’
শাহারিয়ারের বিষয়ে আবেদনে বলা হয়, ‘আসামি এবিএম শাহারিয়ার ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৪ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন। আসামি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবিপ্রধানের পদসহ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করায় মামলা হয়েছে। তদন্তকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, আসামি শাহারিয়ার তার মালিকানাধীন ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। যা করতে পারলে ওই মামলায় আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে স্থাবর সম্পত্তিগুলো জব্দ ও অস্থাবর সম্পত্তিগুলো অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।’
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান তখনকার ডিআইজি হারুন। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন