বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের কোনো শ্রদ্ধা নেই : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের কোনো শ্রদ্ধা নেই। এক সুদূরপ্রসারী মাস্টার প্লানের অংশ হিসেবেই ভারতের নাগরিকদের বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের সরকার এ বিষয়ে কেন জোরালো ভূমিকা নিতে পারছে না। বর্তমান সরকারের নেই কোনো উদ্যম, নিষ্ঠা ও মৌলিকতা। এ নিয়ে জনমনে বড় আকারের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের পর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের এক নতুন বিবর্তিত রূপ দেখা যাচ্ছে। গত মে মাসে বিএসএফ সীমান্তে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ছয় বাংলাদেশিকে। অসংখ্য ভারতীয় নাগরিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে প্রতিদিনই শত শত লোক বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। ভারত দ্বি-পক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি না মেনে ভারতীয় নাগরিকদের গায়ের জোরে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সৎপ্রতিবেশী সূলভ সম্পর্কের নীতির পরিপন্থী কাজ। ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কখনই সু-সম্পর্ক রাখতে চায় না। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ‘পুশইনসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে’। কৌশলে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবেই পুশইন, ল্যান্ডপোর্টে বাংলাদেশের পণ্যের পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতে থেকে হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের সাথে দুর্ব্যবহার ইত্যাদি প্রমাণিত হয় তারা বাংলাদেশকে সমমর্যাদার ভিত্তিতে নয়, আগ্রাসী দৃষ্টিতেই দেখে।
তিনি বলেন, এবারের ঈদুল আজহা ফ্যাসিস্ট মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভয়, আতঙ্ক, গুম-খুন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের আগ্রাসী থাবা থেকে দেশবাসী অনেকটাই স্বস্তিতে ঈদের উৎসবে শামিল হবে। শান্তি, স্থিতি ও নাগরিক স্বাধীনতা জনগণের কাম্য। কিন্তু ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্র ও সমাজে সন্ত্রাসের বিভীষিকা নামিয়ে জনসমাজে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৬ বছর গণতন্ত্রের সকল নাম-নিশানা মুছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঐতিহ্যকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করে ক্ষমতা আকড়ে ছিল। অবশেষে ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হয়েছে শেখ হাসিনা। কোনো নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকরা সব সময় মনে করে জনগণকে দমন করে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব। কিন্তু তা যে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয় সেটা তারা ক্ষমতায় থাকতে উপলবদ্ধি করে না। যে কারণে ঘটনাবহুল ঝড়ঝাপটার মধ্যে পতন হয় করুণ-বেদনাদায়ক ও অপমানজনকভাবে।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, গত বছর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণ দ্বারা সমর্থিত। সরকারের প্রতি জনগণ বিশাল কিছু প্রত্যাশা করে না। কিন্তু জনগণ চায় আইনের শাসন, আদালত কর্তৃক ন্যায় বিচার, দুষ্টের দমন কিংবা শিষ্টের পালন। আওয়ামী আমলে গণতন্ত্রকামী মানুষকে আইন-আদালতের হৃদয়শূণ্য নির্মম প্রবঞ্চনা ও কপটতার শিকার হতে হয়েছে। বর্তমানে মানুষ আশা করেছিল এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শান্তিতে থাকবে ও ভোগান্তি কমবে। কিন্তু এবারের ঈদেও গত তিনদিন ধরে ঢাকা রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী গাড়িগুলো গন্তব্যে পৌঁছতে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে। মহাসড়কেই দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহন আটকে আছে। এর ওপর চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে। এখনো চারদিকে ফ্যাসিস্ট আমলের দখলদার আর চাঁদাবাজদের বৈচিত্র্যময় বিন্যাস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অনেক বেশি অবনতিশীল হয়েছে। সারাদেশে ছিনতাই আর ডাকাতির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাকাতি-ছিনতাই দস্যুতা ও অপহরণের মত ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে অপরাধ দমনে পুলিশি তৎপরতা অত্যন্ত শিথিল। পুলিশ এখনো প্রো-এক্টিভ হয়নি। মানুষ বলে শেখ হাসিনার আমলে গায়েবি মামলা হতো আর এখন গায়েবী আসামি হচ্ছে! ঢাকা মহানগরী যেন ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিণত হচ্ছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও মিরপুর যেন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে। দিনে দুপুরে মগবাজারে চাপাতি দিয়ে গুরুতর আঘাত করে একজন কিশোরের সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। আশপাশের মহাসড়কগুলোতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাত্রা কোনভাবেই কমছে না। সংবাদ পত্রের তথ্যনুযায়ী ফ্যসিবাদের শেষ বছরের তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ৬.১৬ শতাংশ। এই ঈদেও মানুষের মন থেকে চুরি-ডাকাতির আতঙ্ক দূর হচ্ছে না। মানুষকে নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত করতে সরকারের ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দ্রুত জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ স্থান গড়ে তুলতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অতীব জরুরি।
রিজভী বলেন, একদিন আগেও অনেক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। ঈদের আনন্দ সমভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়। অথচ স্বল্প আয়ের শ্রমজীবীরা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরা কোনো রকমে কায়ক্লেশে বেঁচে আছে। এদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঈদুল আজহা পালন করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব ছিল এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে ফেলা। এটাই একটি জনসমর্থিত সরকারের প্রধান কাজ। অথচ এ বিষয়ে সরকার নির্বিকার ও উদাসীন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস মিটিয়ে দেয়ার জোর আহ্বান জানান রিজভী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাত্তার পাটোয়ারী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদুল কবির, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।
(ঢাকা টাইমস/০৬জুন/জেবি/এসএ)

মন্তব্য করুন