আ স ম আব্দুর রব কি হারিয়ে গেলেন?

জাতীয় রাজনীতিতে কি গুরুত্বহীন হয়ে পড়লেন একসময়ের ডাকসাইটের জাতীয় এই নেতা? নাকি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আ স ম রব দেশের সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনে নিশ্চুপ? আ স ম রব কি কোনো কারণে অভিমান আর বিরক্ত হয়েও চুপ আছেন?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ঢাকাটাইমস জানতে পেরেছে, মূলত অসুস্থতাজনিত কারণে রাজধানীর উত্তরায় তার বাড়িতে বিশ্রামে দিন কাটাচ্ছেন জাসদ সভাপতি আ স ম রব।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে আ স ম রবের আলাদা একটা গুরুত্ব সব সময়েই ছিল এবং আছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ স ম রব কোন পরিস্থিতিতে জাসদ প্রতিষ্ঠায় জড়িত হন সেটা হয়তো অনেকেরই জানা।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য হন আ স ম রব। বিএনপি বয়কট করলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তাতে অংশ নিয়ে সেই সংসদে বিরোধী দল হয় তারা। পরে আওয়ামী লীগের সদস্যরা পদত্যাগ করে আন্দোলনে যোগ দিলে সেই সংসদ টিকে মাত্র দুই বছর।
১৯৮৮ সালে বিএনপি-আওয়ামী লীগ বিহীন এরশাদের সাজানো ও পাতানো একতরফা নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন আ স ম রব। সেই সময় তাকে জাতীয় সংসদে গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা বলে অ্যাখ্যা দেওয়া হয়।
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর জাতীয় রাজনীতিতে আ স ম রব কিছুদিনের জন্য খানিকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিলেন। তবে ১৯৯৬ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আবারও পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। বিশেষ করে ওই সময়ে সরকার গঠনে আওয়ামী লীগ যখন দৌড়ঝাঁপ শুরু করে, তখন জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য আ স ম রব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
একটি দলের একমাত্র সংসদ সদস্য হয়েও আ স ম আব্দুর রব কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং কীভাবে সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নেন, তার নেপথ্যে আছে চমকপ্রদ এক কাহিনী। কে এই ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকায় ছিলেন?
ঢাকাটাইমস অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই সময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন এবং ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা।
আব্দুল আউয়াল মিন্টুই মূলত শেখ হাসিনার সঙ্গে আ স ম রবের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং বিশেষ করে জাসদ রব সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে যে সমর্থন করবে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এমনকি আ স ম রবের সঙ্গে যোগাযোগ করে লক্ষ্মীপুর থেকে সরাসরি তাকে সস্ত্রীক ঢাকায় এনে গুলশানে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নিজের বাড়িতে তোলেন। এটি পুরোটাই ছিল আব্দুল আল মিন্টুর ব্যাপক উদ্যোগ।
আমরা যেটা জানতে পেরেছি, শেখ হাসিনার সঙ্গে আব্দুল আউয়াল মিন্টুই পুরো মধ্যস্থতাটা করেন। কিভাবে? কেন আ স ম রব সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে? সেই বিষয়টি ঠিক করেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। শেখ হাসিনা রাজি হন মন্ত্রিসভার সদস্য করার মাধ্যমে আ স ম রবকে পুরস্কৃত করা হবে।
প্রথমে শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় আ স ম রবকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই প্রস্তাব আব্দুল আউয়াল মিন্টু যখন আ স ম রবকে দেন, তখন তিনি ও তার স্ত্রী তানিয়া রব এতে রাজি হননি। তাদের দাবি ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তাদের দিতে হবে এবং সেটি করা হলেই একমাত্র তারা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সমর্থন জানাবেন। লিখিত সমর্থন দেবেন।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু এই প্রস্তাব নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে গেলে তিনি খানিকটা বিরক্তির সুরেই বলেন, "একমাত্র এমপি তার এত শর্ত!"
কিন্তু তখনকার বাস্তবতা ছিল, একটি আসনও সরকার গঠনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাধ্য হয়ে আ স ম আব্দুর রবকে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেয়া হয়। তখনই আ স ম রব আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে তার সমর্থনের কথা জানিয়ে দেন এবং সেই কাগজ রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো হয়।
এভাবেই আ স ম রব মন্ত্রিসভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তবে আ স ম রবকে মন্ত্রী করলেও শেখ হাসিনার বিরক্তি ও হতাশা কাটেনি। সে কারণে তিনি সুযোগ বুঝে আ স ম রবকে পরবর্তীতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেন। তাকে করা হয় মৎস্য পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।
পরবর্তী সময়ে অবশ্য রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আ স ম রবের সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের গুম-খুন, নির্যতন, দুর্নীতির প্রতিবাদ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সোচ্চার ছিলেন আ স ম রব।
(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/এমএইচএল/মোআ)

মন্তব্য করুন