সকলের সম্মিলিত শক্তিই দেশকে ঘিরে অসৎ পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে যথেষ্ট

জুলকারনাইন সায়ের সামি
  প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫২| আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৮
অ- অ+

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষের সরকার বলেই আমি বিবেচনা করি। ছাত্র-জনতার আন্দোলন যারাই সমর্থন করেছেন এবং বছরের পর বছর দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার যেসব ব্যক্তি গণমানুষের অধিকার সমুন্নত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং নানা আত্মত্যাগের ফসল স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের কারোরই উচিত হবে না এমন কিছু করা যা ফ্যাসিজমের বিষবাষ্প নিঃসরণের এক বিন্দু পরিমাণ সুযোগ করে দেয়। আমাদের কারো দ্বারা যদি এমন কিছু ঘটে যা কর্তৃত্ববাদী শক্তিকে কোনো রকমের ইন্ধন যোগায় — তা পক্ষান্তরে এক প্রকারের আত্মঘাতী হবে।

ক্ষমতা আপনাকে বিমোহিত করবে, ক্ষমতা আপনার অবস্থানকে উচ্চতর করবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ক্ষমতায় আরোহণ করে আপনি অন্ধ হয়ে যাবেন। এবং যে সসব শক্তি সম্মিলিতভাবে আপনাকে ক্ষমতায় পৌঁছাল তাদের কোনোভাবে অবজ্ঞা করবেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যেকেই সমাজের বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব। যোগ্যতার বলেই হয়তো তাদের বাছাই করা হয়েছে। কিন্তু এই বাছাই প্রক্রিয়ায় ওই সম্মিলিত শক্তির সঙ্গে কখনোই কোনো রকমের পরামর্শ করা হয়নি। কেবল নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন, বিভিন্ন রকমের নির্দেশনা এবং বিতর্কিত অসংখ্য নিয়োগ দিচ্ছেন, যা একেবারেই কাম্য নয়। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যেমন ফ্যাসিবাদ বিদায়ে সফলতা এসেছে, বর্তমান সরকারের সফলতাও ওই সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অর্জন করতে হবে।

কারো অবদানকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই, কারণ অবদান মাপা যায় না, আর দেশপ্রেম, দেশের জন্য কার কতটুকু করার বাসনা সেটা পরখ করে দেখার কোনো পরশপাথরও নেই। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে বেশ শান্তিপ্রিয় মানুষ, যার যা সম্মান তা প্রদানে আমি কখনোই কুণ্ঠাবোধ করি না। কিন্তু দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে যখন চারদিকে একে অপরকে আক্রমণ করার একটা প্রবণতা দেখছি, তা শুধু আমাকেই নয়, বরং ৫ আগস্ট বিজয় অর্জনের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে শংকিত করছে।

যে কোনো সম্পর্কের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস এবং তা সম্ভব নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে প্রযুক্তি আমাদের ভৌগোলিক দূরত্ব একরকমে মিটিয়ে দিয়েছে, তারপরেও কেন আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একে অপরের বিষয়ে যেসব ভুল ধারণা আছে তা পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হচ্ছি? ক্ষমতায় থাকা আমাদেরই ঘনিষ্ঠজনদের কী এমন সমস্যা হচ্ছে যে তারা গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের মতামত/পারমর্শ আমলে নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন? কেন অহেতুক আমরা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছি, কেন আমরা সবাইকে সমকক্ষ ভাবছি না? পৃথিবীর সবার শিক্ষা, যোগ্যতা, মেধা কখনোই এক হবে না, তার অর্থ এই না যে ফ্যাসিজম হটাতে যারা এক হয়েছিলেন তাদের মধ্যেও এসব নিয়ে ভেদাভেদ সৃষ্টি হবে। যারা নিজেদের সেরা ভেবে আকাশে উড়ছেন, তাদেরও বলব মাটিতে নামুন। নাক উঁচু স্বভাব পরিহার করুন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করুন। সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা রাখুন, আপনি যাকে পরামর্শ দিচ্ছেন তার কাছ থেকেও পরামর্শ গ্রহণের মানসিকতা রাখুন, একতরফা কোনো সম্পর্কই সুস্থ হয় না।

পরস্পরের সঙ্গে শক্ত সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিশ্চিত এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে সবাই এক সঙ্গে ভূমিকা রাখবেন সেটাই কামনা করছি এবং আমাদের সবার সম্মিলিত শক্তিই বাংলাদেশকে ঘিরে বিভিন্ন চক্রের অসৎ-কুপরিকল্পনা নস্যাৎ করতে যথেষ্ট।

লেখক: প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশে জলবায়ু সংকটে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত: ইউনিসেফ
ভোটের অধিকার ফেরাতে জনগণকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে: তারেক রহমান
ফ্রুটিং ব্যাগে ঝিনাইদহে কলা চাষে নতুন সম্ভাবনা
বাজিতপুরে বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা