নাসিরনগরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও ছয় হিন্দু বাড়িতে আগুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু অধুষ্যিত এলাকায় ছয়টি বাড়িতে আগুনের ঘটনায় আবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গত বরিবার সেখানে নির্বিচারে হামলা, ভাঙচুরের পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই এই ঘটনাটি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসনকেও।
ফেইসবুকে কথিত ধর্মীয় অবমাননার একটি ছবি পোস্টকে কেন্দ্র করে গত রবিবার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর বেপরোয়া হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ১৫টি হিন্দু মন্দির গুড়িয়ে দেয়া ছাড়াও শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা। সারাদেশে আলোড়ন তোলা এই ঘটনার বিচারে সরকারের আশ্বাসের মধ্যেই নতুন করে আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটলো।
স্থানীয় সাংবাদিক জাবেদ রহিম বিজন ঢাকাটাইমসকে জানান, গত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার দক্ষিণপাড়া, মধ্য পাড়া, পশ্চিমপাড়া ও গাংপুল এলাকায় একই সঙ্গে আগুন দেয়া হয়। এটা নাশকতা কি না, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত না হলেও এই সংবাদকর্মীর ধারণা, এটাও একটি পরিকল্পিত হামলা।
জনাব বিজন বলেন, আগেরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি বড় মাদ্রাসার ফটকে তালা ঝুলিয়ে এতে ধর্ম অবমাননার কথিত স্টাটাসটি ছাপিয়ে তাসে সেঁটে দেয়া হয়। এর পর দিনই রাতে একই সঙ্গে ভিন্ন এলাকার ছয়টি বাড়িতে আগুনের ঘটনা নিঃসন্দেহে কোনো দুর্ঘটনা নয়।
গত রবিবার ওই এলাকায় তাণ্ডবের পর র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকার পরও এই ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটলো- জানতে চাইলে ওই সংবাদকর্মী বলেন, যে বাড়িগুলোতে আগুন লেগেছে, সেগুলো একটু ভেতরেরদিকে, ঘিঞ্জি এলাকায়। ওখানে হয়ত নিরাপত্তাবাহিনীর টহল সদস্যরা সব সময় যেতেন না। তিনি জানান, আগুন ধরা ঘরগুলো গোয়াল ঘর বা জিনিসপত্র রাখার জন্য বাড়ির পাশে বাড়তি ঘরের মতো। কিছু কাঠ পুড়ে যাওয়া ছাড়া বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এতে ওই এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলেও জানান জনাব বিজন।
ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় একই সঙ্গে আগুন লাগার পরও একে নাশকতা বলছেন না নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী শওকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগুন কীভাবে লেগেছে তা এখনও জানা যায়নি। আমরা তদন্ত করে দেখিছি কেউ আগুন দিয়েছেন কি না।’ এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে আগুন ধরানো হয়েছে। তদন্তের পরই বিষয়টি বোঝা যাবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর কবিরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদেরকে আগুন লাগানোর খবর জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, নাসিরনগরের অবস্থা ভালো নয়, আমরা যেন সতর্ক থাকি।’
এই ঘটনার পর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সকালে তার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদেরকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের আগে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি নাশকতা না কি নিছক দুর্ঘটনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
গত রবিবার ঘটনাটি সারাদেশে আলোড়ন তুললে তৎপর হয় স্থানীয় প্রশাসন। ছুটে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলও। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার ঘোষণাও দেয় তারা। ওই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারও করে প্রাশাসন। এলাকায় মোতায়েন করা হয় বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষী। প্রত্যাহার করা হয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদেরকে।
ঘটনাটি তদন্ত করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধি দলও। কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ কাজী রিয়াজুল হক জানিয়েছেন, তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। ফেইসবুকে যার নামে এসব ছবি পোস্ট করা হয়েছে, তার পক্ষে এসব ছবি এডিট করা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়েছে তাদের। ওই হামলার ঘটনার ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, হামলাকারীরা প্রশিক্ষিত বলেই মনে হয়েছে তাদের কাছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে বলেও মনে করে কমিশন।
ঢাকাটাইমস/৪নভেম্বর/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন