যুবলীগ কর্মী বাবু হত্যার রহস্য উন্মোচনের পথে

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:২৫
অ- অ+

মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী রিজভী হাসান বাবু হত্যার রহস্য উন্মোচন হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে দুজনের জবানবন্দিতে পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের নাম বেরিয়ে এসেছে। তবে ওই হত্যায় অংশ নেয়া ছয়জনের কেউই মামলার এজাহারভুক্ত নন।

আর বাবু হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এজিবি কলোনির পোস্ট অফিস অতিথি ভবনের ছাদে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক।

আসামিদের জবানবন্দি ও তদন্তের সূত্রে ঢাকাটাইমসকে এসব তথ্য জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক কামরুল ইসলাম।

২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মতিঝিল এলাকায় রিজভী হাসান বাবুকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় তার বাবা আবুল কালাম বাদি হয়ে মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে মামলাটির তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশে আসার পর বেরিয়ে আসে প্রকৃত খুনিদের পরিচয়। গ্রেপ্তারকৃত আটজন, যারা আদালত থেকে জামিন পান, তাদের মধ্যে শুধু নাসির উদ্দিন নামের একজন এই হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে নাসিরকে আবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে গ্রেপ্তার হয় অন্য খুনিরা। এর মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, তার সহযোগী নাসির উদ্দিন এবং সুমন শিকদার ওরফে মুসা। এই তিনজন রিজভী হত্যাণ্ডের এক মাস আগে এজিবি কলোনির পোস্ট অফিস অতিথি ভবনের ছাদে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। তবে হত্যাকাণ্ডে নাসিরের সঙ্গে অংশ নেয় সালেহ আহমেদ ওরফে সালেহ, অমিত এবং অমিতের দুই সহকর্মী।

তাদের মধ্যে ওমর ফারুক, তার সহযোগী নাসির উদ্দিন, সুমন শিকদার ওরফে মুসা, সালেহ আহমেদ ওরফে সালেহ গ্রেপ্তার হয়েছে। আদালতে জবানবন্দি দেন সহোদর মুসা ও সালেহ।

জবানবন্দির আলোকে গোয়েন্দা পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, বাবুকে হত্যার ব্যাপারে ওমর ফারুকে উসকে দেন নাসির উদ্দিন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ওমর ফারুকের হলেও সেটি সব সময় থাকত তার সহযোগী নাসির উদ্দিনের কাছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, মূলত মতিঝিল এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাবু খুন হন। বাবু কিছুটা বেপরোয়া প্রকৃতির ছিলেন। এটি অনেকের অপছন্দ ছিল। এজিবি কলোনির পোস্ট অফিসের অতিথি ভবনের ছাদে যখন হত্যার পরিকল্পনা করা হয়, তখন সেখানে ছিলেন ওমর ফারুক, তার সহযোগী নাসির উদ্দিন ও মুসা। নাসির উদ্দিন যখন ওমর ফারুককে বাবুর বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছিলেন, তখন ওমর ফারুক বলেন, ‘তোমরা যা পার করো।’ এভাবে বাবু হত্যার অনুমোদন দিয়ে সেখান থেকে চলে যান ওমর ফারুক।

তদন্ত ও জবানবন্দি থেকে পাওয়া হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, কোরবানি ঈদের দুই দিন আগে মুসা তার ছোট ভাই সালেহকে ফোন করে বাবু হত্যার পরিকল্পনার কথা জানায়। তখন সালেহ বলে, ‘আমার কাছে বই (অস্ত্র) নেই’। মুসা বলে, ‘তোমার বই লাগবে না, বই জোগাড় হয়ে যাবে।’

কোরবানি ঈদের দুই দিন পরে মুসা সালেহকে ফোন দিয়ে ফকিরাপুলের অমিতের নম্বর দেয়। হত্যাকাণ্ডের দিন সালেহ বিমানবন্দর থেকে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে ফকিরাপুলে যায়। সেখানে অমিত দুজন লোককে তার গাড়িতে তুলে দিয়ে বলে, ‘তোমরা যাও, আজকেই কাজটি করতে হবে। আমিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকব।’ এবং তাকে নাসির উদ্দিনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে বলে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, বাবু হত্যার দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নাসির উদ্দিনকে ফোন দেয় সালেহ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সালেহের কাছে একটি রিভলবার দেয় নাসির উদ্দিন। বাবু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়িটি নিয়ে তারা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে রাখে। নাসির উদ্দিনই ক্লাবের সামনে বাবুকে ইমনের সঙ্গে কথা বলতে দেখে সালেহকে জানায়। তখন সালেহ, অমিত তার সঙ্গে দুজন এবং নাসির উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বাবু ও ইমন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বাবু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো সালেহ তার ভাতিজা আকাশের হেফাজতে রাখেন। ২০-২২ দিন পর ভাতিজা আকাশের কাছ থেকে নিয়ে মিরপুরে তার কথিত ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাবুর কাছে রাখে।

গত ২৫ মার্চ রাজধানীর মাতুয়াইল মাঝপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয় কিলার সালেহ আহমেদ সালেহ। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে রাজধানীর পল্লবী কালাপানি এলাকা ১২ নম্বর সেকশনের ছয় নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়ি থেকে কামরুজ্জামান বাবুর হেফাজত থেকে একটি রিভলবার, একটি পিস্তল এবং নয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

সালেহের দেওয়া স্বীকারোক্তিমতে ২৬ মার্চ রাতে নাসির উদ্দিনকে, নাসিরের দেওয়া তথ্যমতে ২৭ মার্চ মুসাকে, এবং সবশেষে মুসার দেওয়া তথ্যমতে ২৯ মার্চ যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রথমবার সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার নাসিরসহ আটজন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে নেন। পরে সালেহর স্বীকারোক্তির পর নাসিরকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি সন্দেহভাজন সাতজন জামিনে আছেন।

বাবু হত্যা মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মতিঝিল থানা থেকে গোয়েন্দাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/মোআ)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিজয় দিবসে ঢাকা মহানগর ছাড়া সারা দেশে বিএনপির র‌্যালি
১৬ বছরের দুঃশাসন শেষ হতে ১৬ দিন লাগেনি: অসীম
মঈন খানের বাসভবনে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মধ্যাহ্ন ভোজ
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর করা হবে: তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা