গুলশানে প্রবাসীর বাড়ি দখলে নিয়ে অবৈধ কারবার হিট অফিসারের স্বামী ও হারুনের!

জনরোষে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও অপরাধ জগতে ক্ষমতার দাপট কমেনি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ের স্বামী আহমেদ জাওয়াদ রায়হান রাবি ও ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন-অর রশীদ চক্রের। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে একটি দোতলা বাড়ি জোরপূর্বক দখলে রেখে সেখানে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ সিসা, মদের বার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে তাদের এই বেপরোয়া কার্যক্রম। ‘দ্য কোর্টইয়ার্ড বাজার রেস্টুরেন্ট’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়তে নেওয়া হয়নি কোনো ধরনের অনুমতি।
আবাসিকের ভাড়া চুক্তি করে রেস্তোরাঁ স্থাপন এবং তার আড়ালে অবৈধ ব্যবসার কথা জানতে পেরে বাড়ির মালিক এসব কর্মকাণ্ড বন্ধের তাগিদ দিলে উল্টো তাকে হুমকি দিচ্ছে চক্রটি।
আহমেদ জাওয়াদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে হিট অফিসার বুশরা আফরিনের স্বামী। শ্বশুরের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করে আসছেন বলে অভিযোগ।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী জাপান প্রবাসী মুর্তজা রেজা নিজের শতকোটি টাকা মূল্যের জমি ও বাড়ির বেদখল ঠেকাতে এবং সেখানে অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর ওই বাড়িতে গেলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাকে হুমকি-ধমকি দেয়।
এর আগে ডিবির সাবেক প্রধান হারুন যখন কর্মরত ছিলেন, তখন মুর্তজাকে ডিবিতে ডেকে নিয়ে শাসান তিনি। নিষিদ্ধ এই সিসা বারে হারুনের বিনিয়োগ আছে বলে তিনি ডিএমপিতে থাকা অবস্থায় এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সিসাকে মাদকদ্রব্যের ‘খ’ শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে হুমকির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বাড়ির মালিক মুর্তজা রেজা। গুলশান থানায় করা ওই জিডি তদন্তে পুলিশ আদালতের অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি মিললেই তদন্ত শুরু হবে বলে ঢাকাটাইমসকে জানান গুলশান বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জিয়াউর রহমান।
আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি মাত্র অবহিত হলাম। কেউ আমাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেনি। সেখানে আইনের ব্যত্যয় হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র বলছে, গুলশান-১ সার্কেলের ১১২ নম্বর সড়কের ২১/এ প্লটের ৮.৩৭ কাঠা জমির মালিক মুর্তজা রেজা। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে আবাসিক হিসেবে বাড়িটি ভাড়া দেন অটোমোবাইল ব্যবসায়ী রায়হান আজাদ টিটোকে। প্রতি মাসে লাখ টাকা ভাড়ায় এক বছরের জন্য চুক্তিতে বাড়িটিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়া শুধু বসবাসের শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয় রেস্তোরাঁ।
চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় রায়হান আজাদকে বাড়ি ছাড়তে নোটিশ দেন মুর্তজা রেজা। পরবর্তীতে আতিকুল ইসলামের মেয়ে আলোচিত চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের স্বামী আহমেদ জাওয়াদ রায়হান রাবি চাপ দিয়ে আবার আবাসিক ভাড়া চুক্তি করতে বাধ্য করেন মুর্তজা রেজাকে। তাতে ব্যবহার করা হয় ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদকে।
দীর্ঘদিন ওই বাড়ি সিসা বার, মদ বিক্রি ও কেবিন রুম খুলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলায় বাড়ি ছাড়তে আবার নোটিশ দেন মুর্তজা রেজা। এরপরই তাকে হুমকি-ধমকি দেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ ঘটনায় ৩১ অক্টোবর গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
মুর্তজা রেজার দাবি, রেস্তোরাঁর আড়ালে সিসা বার বন্ধে বহুবার চাপ দেওয়া হলেও হারুন-জাওয়াদ সিন্ডিকেট তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। এখনো অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে বাড়িটি। ৫ আগস্ট প্রবল গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ডিবি হারুন’ পালালেও পুরোদমে চলছে তাদের সিন্ডিকেটের গড়া সিসা বারটি।
জানা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই সিসা বারে চলে ঢাকার ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের সিসা সেবনসহ অশ্লীল কর্মকাণ্ড। সেখানে রয়েছে একাধিক প্রাইভেট কক্ষ। টাকার বিনিময়ে ওই কক্ষ ভাড়া নিয়ে সেখানে যথেচ্ছাচার করতে পারেন তারা। গতকাল শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ও আজ শনিবার ওই বারে তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা দেখা গেছে।
তবে সরেজমিনে জানা গেছে, যে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। নিয়মিত ও বিশেষ চেনা-জানা ব্যক্তির জন্য প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। অনৈতিক এই কর্মকাণ্ড চালাতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগ আছে জাওয়াদ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেষ্টা করেও জাওয়াদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর ডিবির সাবেক প্রধান হারুন পলাতক থাকায় তারও বক্তব্য মেলেনি।
(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন