ঘুরে ঘুরে বিদ্যাদান করে চলছেন শিক্ষক তরিকুল
তরিকুল আলম একজন সহকারী শিক্ষক। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিদ্যালয়ে যেতেন, ছুটি হলে বাড়ি ফিরতেন। দীর্ঘ এই অভ্যাসে হঠাৎ একদিন ছেদ পড়ল। ৫৭ বছর বয়সের তরিকুল আলম চাকরি থেকে অবসরে চলে গেলেন। চাকরি শেষ হয়ে গেল, কিন্তু তাই বলে তার ‘জ্ঞান’ বিতরণে ছেদ পড়ল না।
অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক তরিকুল আলম আবারো ফিরে গেলেন শ্রেণিকক্ষে, শিশুদের কাছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫০টি বিদ্যালয়ে এখনো প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে বিদ্যাদান করে যাচ্ছেন তরিকুল আলম। শুধু পড়ানোর আনন্দে, শিশুদের আলোকিত করার আনন্দের জন্য এখনো এই বয়সে তিনি স্কুলে স্কুলে ঘুরে ক্লাস নেন।
সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের গোয়ালটুলী গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই মানুষটি। দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তরিকুল আলমের পরিবার।
প্রথম শিক্ষকতা শুরু হয় বিনা পারিশ্রমিকে। শেষ জীবনেও তিনি বেছে নিলেন সেই একই পন্থা। জেলার যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট আছে, সেসব বিদ্যালয়ে ছুটে যান তরিকুল আলম ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদান করতে।
শিক্ষক তরিকুল আলম জানান, তিন বছর আগে অবসরে গেলেও এখনো ঘুরে ঘুরে পাঠদান করে যাচ্ছেন স্কুলে স্কুলে। ছাত্র-শিক্ষকের ভালবাসায় ঘুরে ঘুরে শিক্ষাদানে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চান তিনি।
পারিশ্রমিকের কথা না ভেবেই তরিকুল আলম অবসর গ্রহণ করার পরেও এই মহান কাজটি করে বেড়াচ্ছেন। এ যেন ছাত্র-ছাত্রীর ভালবাসা ও শিক্ষার টানে।
তবে তরিকুল আলমের এই আনন্দ একতরফা নয়। আজাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যারের ক্লাস খুব ভালো লাগে অনেক আনন্দ পাই। তিনি আমাদের সবার কাছে আদর্শ শিক্ষক।’
তরিকুল আলমের মতন একজন মহান শিক্ষককে দেখে জেলার অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকরাও গর্বিত। আজাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এমন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আমাদের জেলায় খুব কমই আছেন। মাঝেমধ্যেই তরিকুল স্যার এসে পড়ান। এতে শিক্ষার্থীরা ভালোই উপকার পাচ্ছে। মহৎ এই মানুষটির আজীবনের স্বপ্ন বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া আর পাঠদান করতে করতেই যেন তার জীবনাবসান হয়।’
(ঢাকাটাইমস/১০জুন/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন