দেড়শ বছরের দিনাজপুর পৌরসভা এখন ময়লার ভাগাড়
প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো প্রথম শ্রেণির পৌরসভা দিনাজপুর এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে স্বাভাবিক সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পঁচা দুর্গন্ধে ঘটছে বায়ুদূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও আছে শহরবাসী। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল ও উপকরণ সংকটে ময়লা সরাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।
১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর পৌরসভা। ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় এই পৌরসভা। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই পৌরসভায় এখন জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। ৭৪টি মহল্লা নিয়ে গঠিত এ পৌরসভায় ১৬টি কলেজ, ২৪টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২২টি কিন্ডারগার্ডেন স্কুল, ৩৫টি মাদ্রাসা, ১৪৮টি মসজিদ, ২৪টি মন্দির, চারটি গির্জা রয়েছে। রয়েছে ৫৮টি ব্যাংক, ৬২টি বিমা, ৯টি হাসপাতাল, ৬৫টি ক্লিনিক, ৬৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ৬৭টি এনজিও প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় নেই পয়ঃনিষ্কাশনে পরিকল্পিত ব্যবস্থা। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। যা ড্রেনের সাথে মিশে গিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের পথে সৃষ্টি করছে প্রতিবন্ধকতা। ফলে সামান্য একটু বৃষ্টিতেই শহরে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাববন্ধতা।
পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শহরে ময়ালা-আবর্জনার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নির্মাণ হচ্ছে না। এর কারণে শহরের সুস্থ পরিবেশও বিনষ্ট হচ্ছে। সর্বত্র পঁচা দুর্গন্ধের চিত্র। স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও আছে শহরবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে হোটেল রেস্তোঁরা ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের ময়লা-আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট খাবার বা নিত্যদিনের বর্জ্য যত্রতত্রই ফেলে রাখা হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, ফেলানো ময়লা-আবর্জনা পথচারীদের পায়ে পায়ে এবং গরু, শূকর-কুকুরের নাড়াচাড়ায় ড্রেনের মধ্যে গিয়ে মিশে যাচ্ছে। আর এ কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে সামান্য একটু বৃষ্টিতেই তীব্র জলাবব্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শহরবাসীকে।যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা গাড়িতে করে তুলে নিতেও উদাসীনতা রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের।
এসব পথ দিয়ে যাতায়াতকারীরা দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে হেঁটে যাচ্ছেন। এছাড়া আশপাশে দোকানিরা তীব্র দুর্গন্ধের মধ্যেই বাধ্য হয়ে থাকছেন। এ অবস্থায় মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিরমুখে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর শহরবাসীও এসব যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ চাইছেন।
পৌরবাসীর অভিযোগ, ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পরিকল্পিত কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। এ নিয়ে পরিকল্পনা করা দরকার। তা না হলে শহর যেমন অপরিচ্ছন্ন হবে তেমনি মানুষের শরীরেও নানা রোগ বাসা বাঁধবে।
এছাড়াও ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা তুলে সড়কে রাখায় শহরের রাস্তা পায়ে হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ড্রেনের আবর্জনার দুর্গন্ধে পথচারী চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা সড়কের একপাশে স্তুপ করে রাখায় স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল ব্যাহৃত হচ্ছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রাস্তায় ড্রেনের আবর্জনা রেখে কৃত্রিম দুর্ভোগ তৈরি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পৌরবাসীর। শহরের প্রতিটি রাস্তার দুই পাশে আবর্জনার বিশাল স্তুপ। যাবতীয় উচ্ছিষ্ট। ফলে দুর্গন্ধের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। বহু চেষ্টা তদবিরে কোনো ফল না পাওয়ায় বিষাক্ত পরিবেশেই কাজ করতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। জনপ্রতিনিধিরও এমন অভিযোগ।
প্রায় দুই লাখ জনবসতির প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনো সেকেলে। যত্রতত্র ফেলা ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে মিশে সৃষ্টি করছে প্রতিবন্ধকতা। সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা যায় জলাববন্ধতা। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নির্মাণ না করায় শহরের সুস্থ নির্মল পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সর্বত্র পচা দুর্গন্ধ। মসজিদের প্রবেশ পথে ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও দেখার কেউ নেই। এসব জমে দুর্গন্ধে মসজিদের মুসল্লিদের ইবাদতের ব্যাঘাত ঘটছে।
মসজিদের প্রবেশপথে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ থাকায় যাতায়াতে ও মসজিদের ভেতরে দুর্গন্ধের জন্যে মুসল্লিদের দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে।
এ সমস্যা উত্তরণে কথা হয়েছে পৌরকর্তৃপক্ষের সাথে। দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম পৌর শহরের এ বেহাল দশার কথা স্বীকার করে ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, জনবল ও আবর্জনা বহনের বাহন সংকটের কথা। সেই সাথে সচেতন হতে বলেছেন পৌরবাসীকে।
জনস্বাস্থ্যের হুমকি মোকাবেলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এসব ময়লা-আবর্জনা অতি শিগগির সরিয়ে ফেলতে পৌর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আশা করেন পরিবেশকর্মীরা। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিরও তাগিদ দেন পরিবেশবিদরা।
(ঢাকাটাইমস১১জুন/এসএএস/জেবি)
মন্তব্য করুন