মানুষ জীবন দিচ্ছে, আ.লীগ নেত্রী আনন্দভ্রমণে: খালেদা
চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইডেন সফরের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর আনন্দভ্রমণ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত ইফতারে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া।
গত মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। একই দিন পূর্বনির্ধারিত সুইডেন সফরে রওয়ানা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্যের পথে প্রধানমন্ত্রী রওয়ানা হওয়ার পর ব্যাপক প্রাণহানির খবর জানতে পারেন। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে তিনি সর্বাত্মক ত্রাণ তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দেন। আর বুধবার তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল উপদ্রুত এলাকায় যায়।
তবে খালেদা জিয়া মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে যাওয়া উচিত হয়নি। তিনি বলেন, ‘পাবর্ত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১৫৫ জন মারা গেছেন। আর্মির লোকজনও সেখানে মারা গেছেন। এছাড়া এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেত্রী এখন প্লেজার ট্রিপে আছেন। আনন্দ ভ্রমণে আছেন।’
সাধারণ মানুষের এসব কষ্টের দিকে সরকারের কোনো নজর নেই বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেত্রী। বলেন, এই রমজান মাসে দেশে সবচেয়ে কম দামি চালের মূল্য কেজিপ্রতি ৬০ টাকা।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ-গ্যাস-পরিবহনের ভাড়া সব বাড়তির দিকে। বাড়ি ভাড়াও বাড়ছে তাল মিলিয়ে। লুটপাটের সম্পদ নিরাপদে বিদেশে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনরা এখন ব্যস্ত বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
ইফতার অনুষ্ঠানে নির্বাচনের বিষয়ের কথা বলেন বিএনপি প্রধান। বলেন, ‘দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এজন্য দেশে অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।’
সহায়ককে সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে এমন দাবি করে ২০ দলের নেত্রী বলেন, ‘সহায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে, এবং বিজয়ী হবে।’ তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে উচিত শিক্ষা দেবে। সব অপকর্মের জবাব দেবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন হয় নাই। একমাত্র আমাদের প্রতিবেশী ছাড়া কেউ ওই নির্বাচনে স্বীকৃতি দেয় নাই। কিন্তু এবার তাদের (প্রতিবেশী দেশ) সুর বদল হয়েছে।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি-জামায়াত জোটের নেত্রী বলেন, ‘বিএনপি ও ২০ দল অংশ না নিলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না।’ বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান খালেদা জিয়া।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় শেখ হাসিনার বিদেশ চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মইনউদ্দিন-ফখরুউদ্দিন বললো, তারপরই তো তিনি (শেখ হাসিনা) দেশ ছেড়ে গেলেন। তারপর তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আবার দেশে আসলেন। আসার পর তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে সব কিছু করেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ওই সময় আমাকেও দেশের বাইরে চলে যেতে বলেছিল ওরা। যদি দেশের বাইরে চলে যেতাম, তাহলে আমরা বড় ছেলেটাও (তারেক রহমান) ভালো থাকতো। ছোট ছেলেটাকেও আমি হারাতাম না।’
বিএনপি প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের ছোট ছোট নেতারা বুঝতেছেন সামনের সময়টা ভালো নয়। গণনাকারীরাও এটা বলেছে। কাজেই ছোটখাটো নেতারা যা কিছু বানিয়েছেন, ওগুলো নিয়ে কেটে পড়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, ‘বড় নেতারা তাদের ব্যবস্থা করেছে। পকেটে টিকেট নিয়ে ঘুরছে। অবস্থা দেখলেই তারা উড়াল দেবে- আপনাদের দিকে ফিরে চাইবে না।’
মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ইফতারে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাকর্মী অংশ নেন। ইফতারের আগে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
ঢাকাটাইমস/১৫জুন/বিইউ/ডব্লিউবি/এমআর
মন্তব্য করুন