বর্তমানে কি পরিস্থিতি মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনের
কাতারের বিরুদ্ধে চার প্রতিবেশী দেশের আরোপিত অবরোধের অন্যতম প্রধান কারণ হলো মুসলিম ব্রাদারহুড।কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিচ্ছে এমন অভিযোগে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য, কূটনীতি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলোর চোখে মুসলিম ব্রাদারহুড সন্ত্রাসী সংগঠন, যাদের লক্ষ্য আরব বিশ্বে বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে উল্টে দেয়া।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষক প্যাট্রিক কিংসলে লিখেছেন, মুসলিম ব্রাদারহুড এখন 'বিভক্ত এবং শক্তিহীন' হয়ে পড়েছে।
তুরস্কে নির্বাসিত ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের মতে, সংগঠনটি এখন নিজেদের সদস্যদের উপরই নিয়ন্ত্রণ নেই, মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর ওপর প্রভাব ফেলা তো বহু দূরের কথা। তুরস্কে নির্বাসিত মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মাগদি সালাশ বলেন, আমরা এখানে বসে বসে দিন পার করছি। কিছুই করতে পারছি না।
২০১১ সালে কিন্তু অবস্থাটা এরকম ছিল না। মিশরে গণঅভ্যুত্থানে হোসনি মুবারকের পতনের পর মোহাম্মদ মোরসি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তিউনিসিয়ায় ব্রাদারহুড অনুপ্রাণিত এন্নানহদা সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সিরিয়াতেও প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ বিরোধী বিদ্রোহে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছিল প্রধান ভূমিকা। এসব ঘটনা সৌদি আরব ও আমিরাতের মতো দেশগুলোর শাসক বা বংশানুক্রমিক রাজাদের আতঙ্কিত করে তোলে।
একুশ শতকের রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে বইয়ের লেখক শাদি হামিদ বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে ব্রাদারহুড খুব বেশি বাস্তব সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারছে না। গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস ব্রাদারহুড দ্বারাই অনুপ্রাণিত । তারা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। কিন্তু মূল মিশরীয় গোষ্ঠীটিকে এখন সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সৌদি আরব ও আমিরাতের প্রতি ব্রাদারহুডের মতাদর্শ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে থাকবে।’
মিশরে মোরসি উৎখাত হবার পর হাজার হাজার ব্রা্দারহুড কর্মী গ্রেপ্তার ও নিহত হন। অনেকে কাতার এবং তুরস্কে পালিয়ে যান। তুরস্কে এখন আশ্রয় নিয়েছেন দেড় হাজার ব্রাদারহুড কর্মী। এরা এখন ক্ষমতাহীন, অনেকের পাসপোর্টও নেই। মিশরের সঙ্গে সাধারণ যোগাযোগ রাখতে গিয়েও বিপদে পড়েন তারা। এদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার অপরাধে মিশরে তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির মুখপাত্র আয়মান আবদেল গনি বলেন, মিশরে থাকা পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা কঠিন। আমার শ্বশুরও এখন মিশরে কারাবন্দী। অনেকেরই ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। তুরস্কে তারা তেমন কোন কাজের সুযোগও পাচ্ছেন না। এদের অনেকেই এখন তুর্কি বা কাতারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা তাদের সহমর্মী ধনী ব্যক্তিদের আনুকুল্যের ওপর জীবন কাটাচ্ছেন।
তবে ব্রাদারহুডের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অনৈক্য। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড এবং মিশরের বর্তমান পরিস্থিতিতে কি করণীয়, এসব নিয়ে ব্রাদারহুডের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্য আছে। এক পক্ষ আছেন যারা আগের মত ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে এগুতে চান। অন্য গ্রুপটি মিশরের রাষ্ট্রীয় শক্তিকে মুখোমুখি মোকাবিলা করতে।
কিন্তু নির্বাসিত ব্রাদারহুড সদস্য ডাক্তার আবদুল্লাহ কারইয়ুনির মতে দুই পক্ষই 'অবাস্তব চিন্তা' নিয়ে চলছে। তিনি মনে করেন, ‘এক পক্ষ এখনো অপেক্ষা করছে কবে আল্লাহ তাদের বিজয়ী করবেন। আর অন্য পক্ষ যা করতে চায় তাতে মিশরেও সিরিয়া বা আলজেরিয়ার মতো অবস্থা তৈরি হবে।’
সূত্র: বিবিসি বাংলা
(ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/জেএস)