সাজানো নাটক মঞ্চায়ন করতে চেয়েছিলেন খালেদা: কাদের
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ার পথে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকে ‘সাজানো নাটক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, তবে জনগণ এই নাটক আর বিশ্বাস করে না।
বুধবার সন্ধ্যায় দলটির সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সম্পাদকমণ্ডলীর এক জরুরি সভার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল (ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় সারা দেমে সাত দিনের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় বিএনপির প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেন তারা কুণ্ঠিত, কেন তারা কৃপণতা দেখাল, এটা তাদের মন-মানসিকতার ব্যাপার। যারা ইতিহাসের মহানায়কের (বঙ্গবন্ধু) পাশাপাশি তাদের নেতাকে (জিয়া) খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে, তাদের মন মানসিকতা এখানে পরিষ্কার।’
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া সড়ক পথে গেছেন একটি কারণে। গণ্ডগোলের নাটক সাজাতে বা হামলার নাটক মঞ্চস্থ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু জনগণ জানে এর আগেও বাস পুড়িয়ে হিংস্র খেলা কারা করেছে। আগুন দিয়ে বাস পোড়ানো, পাঠ্যপুস্তক পোড়ানো তাদের পুরনো অভ্যাস।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তার গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে ইউটিউবে যে বক্তব্য এসেছে, যার বক্তব্য এসেছে, তাকে কখন গ্রেফতার করা হবে- এটাই এখন জনগণের প্রশ্ন। এই নেতাকেই তো ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন, ‘এখানে মারো, ওখানে মারো’। এগুলো তো ইউটিউবে পাওয়া গেছে।’
খালেদার গাড়িবহরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা করেছে- বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার গাড়ির চাকা যে পাংচার হয়েছে, সেখানেও কি আওয়ামী লীগের লোক ছিল? ছাত্রলীগ-যুবলীগের কোনো নেতা-কর্মী সেখানে গেছে প্রমাণ দেখাতে পারেনি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) যেটা চেয়েছেন, সে অনুযায়ী মানুষ তো তেমন হয়নি, মরা গাঙ্গে তো আর জোয়ার আসে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার একটা নিউজ করার দরকার ছিল, তাই তিনি একটা ঘটনা ঘটিয়ে সেটাই করিয়েছেন।’
এ সময় ওবায়দুল কাদের বিএনপির বিভিন্ন নাশকতার বিবরণ দেন। তিনি জানান, ২০১০ সালে তারা পাঠ্যবই পুড়িয়েছে। ২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানের সময় তারা বায়তুল মোকাররমে কোরআন শরিফে আগুন দিয়েছে। নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি ৫৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে প্রস্তুত, বাংলাদেশ ফেরত দিতে দেরি করছে’ দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সাং সুচির মুখপাত্রের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। তাদের নেত্রী ও সেনাপ্রধান ও আরও কারা কী বলছে, তাদের কথার কোনো মিল নাই। রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মানবিক সংকট, আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এ জন্য বিশ্বনেতারা আমাদের নেত্রীর প্রশংসাও করেছেন।’ তবে, কে বা কারা ব্যক্তিগতভাবে কী বলল, সেটা যাচাই না করে সরকার কিছু বলবে না জানান তিনি।
৭ মার্চের ভাষণ স্বীকৃতি পাওয়ায় সাত দিনের কর্মসূচি
জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল (ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় সে উপলক্ষে সারাদেশে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। ৪ নভেম্বর দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সম্প্রচার ও সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যালি। ৫ নভেম্বর সারাদেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া প্রার্থনা। ৬ নভেম্বর বিকালে রাজধানী ঢাকা ব্যতীত সারাদেশে আনন্দ শোভাযাত্রা। ৭ নভেম্বর দেশব্যাপী আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন। ৮ নভেম্বর সারাদেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং ৯ নভেম্বর দুপুর আড়াই টায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের স্মৃতি-বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ।
ওবায়দুল কাদের আগামী ৩ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ঘোষিত ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচি সারাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পালনের জন্য আওয়ামী লীগের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
জরুরি বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ড. হাছান মাহমুদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, আবদুস সাত্তার, আফজাল হোসেন, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, ফরিদুন্নাহার লাইলি, সুজিত রায় নন্দী, এসএম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাদেক খান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১নভেম্বর/টিএ/জেবি/মোআ)