ছুটি না বাড়ালে কাল থেকে অনুপস্থিত প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৯ | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৩

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ৩৯ দিনের ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার। তিনি ছুটি বাড়িয়েছেন কি না এমন কোনো তথ্য মেলেনি শুক্রবার পর্যন্ত। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ছুটি না বাড়ালে এখন থেকে প্রধান বিচারপতি অনুপস্থিত বলে গণ্য হবেন।

গত ২ অক্টোবর থেকে ছটিতে আছেন প্রধান বিচারপতি। গত ১৩ অক্টোবর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যান তার বড় মেয়ের কাছে বেড়াতে। ছুটি শেষ হলেও তার দেশে আসা বা ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আজ শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে কানাডা গেছেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে গত সোমবার রাতে সিঙ্গাপুরে পৌঁছান তিনি। কানাডায় প্রধান বিচারপতির ছোট মেয়ে আশা সিনহা থাকেন।

প্রধান বিচারপতির ছুটি ও দেশে ফেরা নিয়ে শুক্রবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ওনার (প্রধান বিচারপতি) ছুটির বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই। তিনি যদি ছুটি বাড়িয়ে না নেন বা কিছু না জানান, তাহলে চলতি ছুটির পর তা অনুপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেনও প্রধান বিচারপতির ছুটির বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই বলে জানান।

ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার সময় সাংবাদিকদের জানান যে তিনি ছুটি শেষে ফিরে আসবেন। দায়িত্বও পালন করবেন। বলেছিলেন, ‘আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। আবার ফিরে আসব।...আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগ যাতে কলুষিত না হয় সে জন্যই সাময়িকভাবে যাচ্ছি।’

তবে প্রধান বিচারপতির দেশে ফেরা ও দায়িত্বগ্রহণ সুদূরপরাহত বলে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতির দেশে ফেরা নিয়ে তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রধান বিচারপতির পদে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সুদূরপরাহত।’

এদিকে আগামী ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের কোনো কার‌্যক্রমে নেই প্রধান বিচারপতি সিনহার নাম। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। এ পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল।

প্রধান বিচারপতি সংক্রান্ত সংবিধানে ৯৭ অনুচ্ছেদে আছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্বপালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’

গত ১২ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ‘রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার...ছুটিকালীন...অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন।’

এর আগে গত ২ অক্টোবর অসুস্থতাজনিত কারণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক মাসের ছুটি মঞ্জুরের পর সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রধান বিচারপতি হিসেবে কার্যভার পালনের দায়িত্ব পান আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।

এর আগে অবকাশকালীন ছুটি শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন ২ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, অসুস্থতার কারণে প্রধান বিচারপতি সিনহা ২ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। তবে বিদেশ যাওয়ার আগ পর‌্যন্ত এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেননি প্রধান বিচারপতি। ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার রওনা হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি অসুস্থ নন, তিনি সুস্থ আছেন।

পরদিন ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের একটি বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে উপস্থিত চার বিচারপতি- মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসেন হায়দারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন।

বিবৃতিতে জানানো হয়, পরে প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে এসব অভিযোগের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের (পাঁচ বিচারপতি) পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোনো কিছু অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আগামী বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/এমএবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন ১৫ হাজার ৫১৫ বাংলাদেশি

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা আসছেন আজ

রপ্তানি করে পাটকে আরও উচ্চতায় নিতে হবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে শিক্ষাথীদের দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতায় আগ্রহী ফ্রান্স: পলক

আবারও দেশের সাত জেলার ওপর বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ

‘স্বপ্নজয়ী মা’ সম্মাননা পেলেন ১১ জন

হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্য গ্রেপ্তার, নিখোঁজরা কি আছে এই তালিকায়?

লু’র সফরে ভিসানীতি ও র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ

আসন্ন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :