কিং খানের বেড়ে উঠা- ১০

যেভাবে ‘বলিউড বাদশাহ’ হয়ে উঠেন শাহরুখ

আনিমুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৪৩ | প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৩৪

১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ দিয়ে বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেন শাহরুখ খান। বলিউডে শুরু হয় শাহরুখ ম্যানিয়া।

১৯৯৪ সালে শাহরুখ অভিনীত আরেকটি ছবি মুক্তি পায়, যেটাতে তিনি খলচরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি হচ্ছে ‘আনজাম’। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের প্রিয় নায়িকা বলিউডের ‘ধাক ধাক গার্ল’ খ্যাত মাধূরী দীক্ষিতের সাথে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু সিনেমাটি ফ্লপ হয়।

এদিকে বলিউডের জার যশ চোপড়া ও তাঁর ছেলে আদিত্য চোপড়া শাহরুখ খানকে পছন্দ করে ফেলেন দারুণভাবে। শাহরুখকে রোমান্টিক নায়ক বানাবার মিশনে নামল চোপড়া ডাইনাস্টি অ্যান্ড কোং। যশরাজ ফিল্মসের ঘরের ছেলে হয়ে উঠলেন শাহরুখ।

২৩ বছরের টগবগে তরুণ আদিত্য চোপড়া নিজে ছবি পরিচালনা করতে চাইলেন। নিটোল ভারতীয় প্রেমের ছবি। নাম নির্ধারণ করা হলো, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’।

যশ চোপড়ার ছেলে বলে কথ। আদিত্য চোপড়ার কোনো অভাব নেই এই জীবনে। তিনি একবার ভাবলেন, এই সিনেমার জন্য পারলে হলিউড মহাতারকা টম ক্রুজকে অফার করবেন তিনি। তাঁর পরিচালনার প্রথম ছবির জন্য তিনি কোনোকিছুতেই ঘাটতি রাখতে চান না। কিন্তু আদিত্য চোপড়ার মনে হলো, টম ক্রুজ তিনি পেয়ে গেছেন। শাহরুখই তার কাছে টম ক্রুজ।

কিন্তু শাহরুখই রাজি হচ্ছিলেন না আদিত্য চোপড়া দফায় দফায় বৈঠক করলেন শাহরুখ খানের সঙ্গে। তাঁর স্বপ্নের ছবি নিয়ে শাহরুখের সাথে চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করলেন। কিন্তু শাহরুখ খান নিজেই তার নেগেটিভ চরিত্রের ইমেজ ভাঙতে চাচ্ছিলেন না। চতুর্থ দফা বৈঠক করার দিন আদিত্য চোপড়া একটু রাগান্বিত হয়েই শাহরুখকে বললেন, ‘দেখুন, আপনি একজন স্টার। সেটা আমি মানি। তবে আপনি হচ্ছেন অটোরিকশাওয়ালাদের স্টার। আপনি কখনোই প্রকৃত সুপারস্টার হতে পারবেন না, যতদিন না আপনি প্রকৃত ভারতীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি পরিবারের ঘরের ছেলে না হতে পারবেন।’

‘আপনাকে হয়ে উঠতে হবে প্রত্যেক কিশোরীর স্বপ্নের পুরুষ, প্রত্যেক বোনের চোখে কাঙ্খিত ভাই এবং প্রত্যেক মায়ের চোখে একজন আদর্শ সন্তান। প্রতিশোধপরায়ন ও মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগীর অভিনয় করে আপনি যতই স্টার হয়ে উঠেন না কেন-আপনি কোনোদিন ভারতীয় সুপারস্টার হয়ে উঠতে পারবেন না।’

কথাগুলো মনে ধরলো শাহরুখ খানের। তবুও তিনি দ্বিধান্বিত ছিলেন। শাহরুখ ব্যাপারটা শেয়ার করলেন তার বাজিগর মুভির প্রযোজক রতন জৈনের কাছে। রতন জৈন ছবির কাহিনি শুনে বলে দিলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই ছবি চলবে না। কারণ, দর্শক আপনাকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।’

শাহরুখের মনে জেদ চেপে গেল। তিনি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’তে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। ছবির কাহিনি গতানুগতিকই বলা চলে। কিন্ত শাহরুখ-কাজলের অভিনয় দক্ষতা, মনোরম লোকেশনে শ্রুতিমধুর গান আর আদিত্য চোপড়ার মুন্সিয়ানায় এই ছবি হয়ে গেল বলিউডের ইতিহাসের মাইলফলক সৃষ্টিকারী সিনেসা।

সিনেমায় শাহরুখের চরিত্রটির নাম রাজ মালহোত্রা। লন্ডনে বড় হওয়া ধনাঢ্য পরিবারের রাজ বন্ধুদের সাথে ভ্রমণ করতে যেয়ে ছবির নায়িকা সিমরানরুপী কাজলের সাথে পরিচিত হন। রাজ-সিমরানের মাঝে ভালোবাসা জন্ম নেয়। কিন্তু সিমরানের বাবা তাঁর জন্য পাত্র ঠিক করে রাখেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে-তার মেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে, তিনি পুরো পরিবারকে নিয়ে ভারত চলে আসেন।

রাজ সিমরানকে অনুসরণ করে তাঁদের গ্রামের বাড়ি পাঞ্জাবে চলে আসেন। রাজের সঙ্গে পালিয়ে যেতে চান সিমরান পরিবারকে ফেলে। কিন্তু রাজ এ প্রস্তাবে রাজি হননি। বলেন, ‘আমি তোমাকে বর সেজে এসেই নিয়ে যেতে চাই। আমি তোমাকে কেবল তখনই নিয়ে যাব, যখন তোমার বাবা নিজ হাতে তোমাকে আমার কাছে তুলে দেবেন।’

রাজ সিমরানদের গ্রামে অন্য নামে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে সিমরানের পরিবারের সব সদস্যদের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেন তিনি। বহু ঘটনার পরে সিমরানের বাবার মন জয় করতে সমর্থ হন রাজ।

সিনেমায় দেখানো হয় প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্মতিটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিলওয়ালেরাই (সাহসী লোকরা) তাদের পাত্রীকে নিয়ে যেতে পারে।

ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৫ সালের ২০ অক্টোবর দিওয়ালি উৎসবে। সুপার ডুপার হিট হয় সেটি। মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দির প্রেক্ষাগৃহে টানা ২০ বছর ধরে এটি প্রদর্শিত হয়। আদিত্য চোপড়ার স্বপ্ন সত্যি হয়। শাহরুখ খান হয়ে উঠেন তরুণ-তরুণীদের আইকন। সুপারস্টার, বলিউড বাদশাহ উপাধিতে ভূষিত করে সবাই।

১৯৯৫ সালের দ্বিতীয় ব্যবসাসফল ছবিটিও শাহরুখ খানের। ছবিতে অবশ্য সালমান খানও ছিলো। নির্মাতা রাকেশ রোশান পরিচালিত সেই ছবিটির নাম হচ্ছে-করণ অর্জুন।

৯৫ সাল শাহরুখের জীবনে স্বরণীয়। বাকি দুই খানের পরে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরু করেও তিনি সিংহাসন দখল করেন এই বছর। ভারতীয় বিজ্ঞাপনের বাজারে অমিতাভ বচ্চন ও শচীন টেন্ডুলকারকে টেক্কা দেন তিনি। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন এক গ্লোবাল আইকন। (চলবে...)

ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/এআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :