কী বার্তা নিয়ে আসছেন ডোনাল্ড লু 

মেহেদী হাসান, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১০ মে ২০২৪, ১০:০২ | প্রকাশিত : ১০ মে ২০২৪, ০৮:২৬

দুই দিনের সফরে আগামী সপ্তাহে ঢাকা আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার এই সফর ঘিরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তিনবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ডোনাল্ড লু। এবার বাংলাদেশে কী বার্তা নিয়ে আসছেন ডোনাল্ড লু তা নিয়েই কূটনৈতিক পাড়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। তবে তার এই সফর দেশের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সরকার দলীয় নেতারা।

আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও চলতি মাসের মাঝামাঝিতে দুই দিনের সফরে ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। ঢাকা সফরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। মতবিনিময় করবেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়েছেন ডোনাল্ড লু। তবে এখনও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।

লু’র আসন্ন সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত মহাসাগরের ঠিক ওপরের দিকে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার বাংলাদেশে থাকলে এখানে তাদের একটা অবস্থান থাকল এমনটা মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য থাকার পরও এখন পর্যন্ত দুই দেশ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জোরালো মনোভাব দেখাচ্ছে। সেদিক থেকে আসন্ন সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ।

একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়াতে ঢাকা সফরে আসছেন ডোনাল্ড লু। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি কিংবা অবনতিও হতে পারে তার এই সফরে। কারণ- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ঢাকা সফরে আসছেন। সরকারদলীয় লোকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াক। গত বছর মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বিষয়ে আলোচনা, শ্রমনীতি ঘোষণা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশও করে দেশটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। শুধু যে নির্বাচন নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তা কিন্তু নয়। ডোনাল্ড লুর সফর একটি গতানুগতিক সফর। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচিতি হওয়া।

তিনি আরও বলেন, কোনো দেশ পৃথিবীতে যখন তার উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করে, তখন বড় আকারের একটা জায়গা তৈরি হয় যে, সেখানে বড় বিনিয়োগ হতে পারে এবং সেখান থেকে বড় লাভ আসতে পারে। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রও চাইবে বাংলাদেশের কোথায় বিনিয়োগ করা যায়। কারণ, এখন তো প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে বিনিয়োগ করতে।’

ডোনাল্ড লু’র সফরে শ্রম অধিকার সুরক্ষা, সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। কেননা এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লুবাখার এর সফরের সময় শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তার সফরসঙ্গী যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফা।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরামের (টিকফা) বৈঠকে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে।

ডোনাল্ড লু ঢাকা এর আগেও সফরে এসেছিলেন গত বছরের জানুয়ারিতে। ঢাকায় অংশীদারত্ব, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল পরের কয়েক মাসে। তবে এ বছর দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপ ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন তা ভাবেনি বাইডেন সরকার। তার নির্বাচন নিয়ে এখন তাদের তেমন কোনো কথা নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। দেশের জনগণ শেখ হাসিনার ওপর যে আস্থাশীল, সেই প্রমাণও দেশটি পেয়েছে বলে দাবি তাদের। এজন্য শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড লুর সফরে দেশটির নতুন এ সম্পর্ক গড়ার কথা জানা যাবে।

ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডোনাল্ড লুর এই সফর নতুন ইস্যু, নতুন কৌশল নিয়ে।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে সেটাও ঠিক নয়। তারা আপাতত পেছনে সরে নতুন কৌশলে অগ্রসর হতে চাচ্ছে। সেজন্যই ডোনাল্ড লু’র এ সফর। তিনি মনে করেন, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সরকারের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা রাখে এমন একাধিক সূত্র বলছে, পররাষ্ট্রনীতি ঠিক রেখেই চলবে সরকার। কারো জন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি করবেন না সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। নিজেদের প্রয়োজনে যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই চলবে সরকার।

(ঢাকাটাইমস/১০মে/এমএইচ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

নির্মাণসামগ্রী বিক্রিতে দীর্ঘদিনের ‘সিন্ডিকেট প্রথা’ ভেঙে দিলেন বিএমপি কমিশনার

চোরাই চিনিতে সয়লাব বাজার

১৮ দিনেও উদ্ধার হয়নি ধর্মমন্ত্রীর আইফোন

শাহিনুদ্দিন হত্যার তিন বছর: ডিবি-পিবিআই ঘুরে সিআইডিতে ঝুলছে মামলার তদন্ত, বিচার চান মা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘মাথাব্যথা’র কারণ কিশোর গ্যাং, দমনে নানা কার্যক্রম 

র‌্যাব ডিজি পদে আলোচনায় যারা

মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে হজক্যাম্প হোটেল 

ছেলেকে ছুঁয়ে দেখেছি, এটা ঈদ আনন্দের চেয়ে বড়: নাবিকের মা

‘গেটলক’ সিস্টেমে চলছে আন্তঃজেলা বাস, ট্রাফিক ব্যবস্থায় ফিরেছে শৃঙ্খলা

দুর্নীতি অনুসন্ধান: ‘দান’ পেয়ে ১৩ কোটি টাকার মালিক স্বামী-স্ত্রী, অবিশ্বাস্য বলে মামলা দুদকের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :