সড়কে এআইয়ের ছোঁয়া, বদলে যাচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা
আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়। হাতের ইশারায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক আইন ভাঙলে গাড়ি থামিয়ে জরিমানার দিন শেষ। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরই মধ্যে এআই পাইলট প্রকল্পের প্রথম ধাপে গুলশান-২ সার্কেলে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক এসব যন্ত্রপাতি। এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ট্রাফিক। ট্রাফিক আইন ভাঙলে তার বিরুদ্ধে হবে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক আইনে মামলা। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুরো চিত্র পর্যবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ট্রাফিক পুলিশসহ একদল কারিগরি টিম। ট্রাফিক আইন ভাঙলে গাড়ির মালিকের মোবাইল নম্বরে চলে যাবে এসএমএস। ১ম ধাপে এসএমএসের মাধ্যমে সতর্কীকরণের কাজটি করা হবে। এমনকি আইন ভঙ্গের ভিডিও ফুটেজসহ সব তথ্য সরবরাহ করা হবে।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গুলশান এলাকায় গুলশান-২ যে ইন্টার সেকশনটা আছে সেখানে পাইলটিং (পরীক্ষামূলক) করা হচ্ছে। এই পাইলটিংটা মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে। এটা আর্টিফিশিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং একটা সিস্টেম। এটা নিয়ে আমাদের লোকাল গভর্নমেন্ট ডিভিশনে এবং হোম মিনিস্ট্রিতে মিটিংও হয়েছে। আমরা এখন এটাকে স্ট্যান্ড করছি। আরও ছয়টা স্থানে ট্রাফিকে অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগে এআইর ব্যবহার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা চলছে। এই বিষয় নিয়ে কমিটিও হয়েছে। আমাদের দেশে ট্রাফিক সেকশনে এআইর ব্যবহার নতুন, তাই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলে ট্রাফিক ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হবে। সহজেই সড়ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল না মানলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলা হবে। এছাড়াও প্রতিটি পরিবহনের বিস্তারিত তথ্য এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যাবে।’
এতে করে অনেক অপরাধীকে সহজেই আইনের আওতায় আনা হবে বলেও মনে করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ট্রাফিকে অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনার সম্পর্কে সিগমাইন্ড এআই-এর প্রতিষ্ঠাতা আবু আনাস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ট্রাফিক আইন অমান্যকারী যানবাহন খুব সহজে শনাক্ত করা যাবে, যানবাহনটি কোন শ্রেণির, যানবাহনটি কোন দিকে যাচ্ছে, যানবাহনটির গতির মাত্রাসহ অন্যান্য সব ফিচার সহজেই জানা যাবে এই অত্যাধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। নরমাল আইপি ক্যামেরাগুলোকে স্মার্ট ক্যামেরায় রূপান্তর করে এই ধরনের বিশ্লেষণ প্রদান করবে এআই।
ট্রাফিক আইন অমান্যকারীকে মুহূর্তেই খুঁজে বের করার ব্যাপারে আবু আনাস বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিও ফুটেজ দেখে খুঁজতে হবে না অপরাধীকে। এআইয়ের মাধ্যমে সহজেই তাকে খুঁজে বের করা যাবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের সড়ক নেটওয়ার্ক এখনো সুশৃঙ্খল নয়। আমাদের লেন বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা নেই, মোটরচালিত যান ও পেশিচালিত যান একই রাস্তায় চলাচল করে এবং যানবাহনের পরিমাণ রাস্তার ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। এমন অবস্থায় কোনো প্রযুক্তিই কাজ করবে না। শহরে যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকলে কোনো ডিজিটাল উদ্যোগই কার্যকর হবে না।’সিগমাইন্ড এআইয়ের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হাসিব মো. ইবনে রফিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সিস্টেমটা আমরা একদম লাইভ মনিটরিং করতে পারি। লাইভ ক্যামেরা দেখাচ্ছে সেখান থেকে আমাদের লাইভ ফিড যদি চলে আসে। লাইভ ফিডকে এআই সিস্টেম দিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করতে পারব। বিভিন্ন ধরনের ট্রাফিক নিয়ম-নীতি যদি আমরা সফটওয়্যারের মধ্যে যুক্ত করে দিই তাহলে ওইভাবে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত জানাতে থাকবে। ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে ইপিজেড, ডিএইচএল, কুমিল্লা স্মার্ট সিটিসহ ১৫টির বেশি জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। লাইভ ট্রাকিংয়ের এই প্রযুক্তিতে প্রচুর পরিমাণ ডেটা উৎপন্ন হয়। গুরুত্বপূর্ণ এসব ডেটার সাইবার সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উবার চালক আহসানুল করিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আইনের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা জানাই। যানজট না থাকলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়। আমরা সবসময় আইন মেনে চলব।’
আরেক চালক আফসার উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি নিয়ম না মানলে অটোমেটিক কেস হয়ে যাবে। নিয়ম না মানার কোনো উপায় নেই। তাছাড়া আমাদের সময়ও বাঁচবে। এটা আমাদের জন্য বিশাল উপকার। সবারই সচেতন হওয়া উচিত।’
পথচারী সাকিব আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আধুনিক ব্যবস্থাপনার কারণে মনে হচ্ছে আমরা বিদেশের উন্নত দেশগুলোর ছোঁয়া পেয়েছি। আমাদের দেশ এখন অনেক আধুনিক হয়ে গেছে।’
(ঢাকাটাইমস/০৫মে/এমএইচ)