মহানগর মহিলা দলের ৬ থানার কমিটি বাতিল, নেত্রীদের গণপদত্যাগ

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২০ মে ২০২৪, ১২:৩৫ | প্রকাশিত : ২০ মে ২০২৪, ১২:১৯

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলন হওয়া ছয়টি থানা কমিটি অনুমোদন নিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় কমিটিগুলো বাতিল করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ছয়টি থানা কমিটির সব নেত্রী একযোগে পদত্যাগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফ এবং সদস্য সচিব রুনা লায়লা স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে গুলশান, বনানী, বাড্ডা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর এবং মিরপুর থানা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু নিজ স্বাক্ষর নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা দলের আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফ। তিনি দাবি করেন, এ স্বাক্ষর তার নয়, এটি জালিয়াতি করা হয়েছে।

মহিলা দলের অনেকে দাবি করেছেন নায়াব ইউসুফই স্বাক্ষর করেছেন। এর আগেও কমিটিতে তিনি স্বাক্ষর দিয়ে অন্যের চাপে এবং ভয়ে পরে অস্বীকার করেছেন।

রবিবার ঢাকা টাইমসে মহিলা দলের কমিটি নিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর ওইদিনই ঘোষিত কমিটিগুলো বাতিল করা হয়। এর প্রতিবাদে বাতিল হওয়া বাড্ডা থানার আহ্বায়ক তাহমিনা শাহিন, সদস্য সচিব সালেহা বেগম, বিমানবন্দর থানার আহ্বায়ক ফারজানা আলী কাকন, সদস্য সচিব সারমিন আক্তার, বনানী থানার আহ্বায়ক রোকেয়া বেগম, সদস্য সচিব কামরুন নাহার জোছনা, গুলশান থানার আহ্বায়ক সালমা বেগম, সদস্য সচিব তাব্বাসুম রিফাত টুম্পা, খিলক্ষেত থানার আহ্বায়ক পান্না ইয়াসমিন, সদস্য সচিব নাছিমা আক্তার, মিরপুর থানার আহ্বায়ক মোছা. খুশি, সদস্য সচিব সামিয়া সাত্তার মিতুসহ কমিটির সব নেত্রী রবিবার রাতে পদত্যাগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের সিংহভাগই দলের ত্যাগী নেত্রী এবং কারাবরণ করেছেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে।

পদত্যাগের বিষয়টি স্বীকার করে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, “রবিবার রাতে পদত্যাগকারী নেত্রীরা আমার বাসায় এসেছিলেন। তারা শিশুর মতো কান্না করেছেন। ওদের কান্না দেখে আমিও আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।”

তিনি বলেন, “যারা পদত্যাগ করেছেন তারা পরীক্ষিত। সরকারি দলের হামলার শিকার হয়েছেন। বুকের শিশুকে বাসায় রেখে এসে আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দি হয়েছেন। রক্তাক্ত হয়েছেন অনেকে। অথচ তারা পদত্যাগ করেছেন। খুব কষ্ট লাগছে।”

নায়াব ইউসুফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, “তারা ক্রাইম করবে পরে আবার কাঁদবে তা হবে না। জালিয়াতির কোনো ছাড় নেই। আগে স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত হবে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

তিনি দাবি করেন, সালমা, রোকেয়া, পান্না এবং তাহমিনা স্বাক্ষর জালিয়াতিতে জড়িত।

ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা দলের সদস্য সচিব রুনা লায়লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আমি মর্মাহত। যারা পদত্যাগ করেছেন তারা হলেন রাজপথের বুলেটপ্রুফ। আমার পদবি না থাকলেও কষ্ট পেতাম না। একটি কর্মী তৈরি করা অনেক কঠিন। এরা ৩০টি বছর সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এরাই প্রথম মশাল মিছিল করেছে। প্রতিটি মেয়েই একাধিক মামলার আসামি। তারা চলে গেলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিছু মানুষের একগুঁয়েমির কারণে মহিলা দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যারা কর্মী তৈরিতে ভূমিকা রাখেনি তারা কর্মীর মূল্যায়ন কীভাবে বুঝবে?”

১৬টি মামলার আসামি এবং ২৮ জুলাইয়ে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে মারাত্মক আহত হওয়া পদত্যাগকারী খিলক্ষেত থানা মহিলা দলের আহ্বায়ক পান্না ইয়াসমিন বলেন, “আমরা ছয়টি থানা একসঙ্গে পদত্যাগ করেছি। পদ-পদবি আল্লাহর দান, ভাগ্যে যদি থাকে তাহলে আবার রাজনীতিতে ফিরব ইনশাআল্লাহ। তবে মহানগর উত্তরের বর্তমান মহিলা দলের কমিটির অধীনে নয়। কারণ এই দুই নেত্রীর (আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব) রেষারেষির কারণে এবং এদের স্বাক্ষর স্বাক্ষর খেলা উত্তরের মহানগর আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফ আপা খেলতে থাকুক। আমরাও দেখি কত খেলতে পারে। ওদের ইঁদুর-বিড়ালের খেলায় আমরা বঞ্চিত। এত মামলা, হামলা, পুলিশ লীগ এবং আওয়ামী লীগের মাইর ও অসুস্থতা নিয়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং সুলতানা আপার নির্দেশে হাজারো প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দলের সঙ্গে টিকে ছিলাম। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে মিটিং-মিছিলে উপস্থিত ছিলাম। এই তার পুরস্কার।”

(ঢাকাটাইমস/২০মে/জেবি/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :