চার মহানগর বিএনপি

কমিটি হলেও সিনিয়র জুনিয়রের ‘ফাঁড়া’, আক্ষেপ বেশি ঢাকা দক্ষিণে

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২৪, ১১:২৭| আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:২০
অ- অ+

বিলুপ্ত হওয়ার প্রায় এক মাস পর ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপি এবং যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে যুবদলের আংশিক কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করা হলেও বিএনপির মহানগরগুলোতে দেওয়া হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি।

ঘোষিত কমিটিতে যাদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে তাদের সিংহভাগই ২৮ অক্টোবরের আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হন। এর মধ্যে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু এবং যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ২৮ অক্টোবরের আগেই পুলিশের হাতে আটক হন। যারা নতুন নেতৃত্বে এসেছেন তাদের মধ্যে একমাত্র যুবদলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন জেলের বাইরে ছিলেন। জেলের বাইরে থেকে আন্দোলনে তিনি রাজপথে ছিলেন সরব।

অবশ্য দলের এহেন সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও আন্দোলনে মাঠে থাকা নেতারা বলছেন, যারা অন্তরীণ ছিলেন তারা আন্দোলনে কিভাবে ভূমিকা রাখলেন? আমরা তিনটি মাস কুকুরের মতো ফেরারি জীবনযাপন করেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। গ্রেপ্তার হইনি। গ্রেপ্তার হলে রাজপথে থাকতে পারতাম না। আন্দোলনে সফলতা পায়নি এটি তো মাঠের নেতাকর্মীদের ব্যর্থতা নয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির এক নেতা বলেন, “২ নভেম্বর আমার কন্যা সন্তান হয়েছে। তিন মাস আমার নবজাতক সন্তানকে দেখতে পারিনি। আমাকে না পেয়ে আমার ছোট ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। রাতের বেলায় যেখানেই লুকিয়ে থাকতাম, সকাল হলেই রাজপথে হাজির হয়ে ঝটিকা মিছিল করেছি।”

তিনি বলেন, “আটক হওয়ার মধ্যে কোনো বীরত্ব নেই।”

এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে নতুন কমিটি দিলেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটি নিয়ে আক্ষেপ করেছেন নগর নেতারা। তবে ঘোষিত যুবদলের কমিটি নিয়ে নেই কারো কোনো অভিযোগ। যুবদলের নেতারা বলছেন, এ কমিটিতে মূলত রাজপথের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই নগর নেতারা আসন্ন কমিটি দুটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ের কথা বলেছেন। ঢাকা মহানগর উত্তরে তার কিছুটা সমন্বয় হলেও দক্ষিণ বিএনপির কমিটি নিয়ে আক্ষেপ করেছেন মহানগর নেতারা। তারা বলছেন, যে দুইজনকে মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ পদে আসীন করা হয়েছে তারা অপেক্ষাকৃত অনেক জুনিয়র। এখানে সিনিয়র নেতাদের রাজনীতি করা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঘোষিত কমিটি নিয়ে দলটির একটি মহল বলছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটিতে দলটির একটি বলয়ের জয় হয়েছে। বিশেষ করে রবিবার কমিটি ঘোষণার দিনই নবগঠিত কমিটি দলের মহাসচিবের সঙ্গে শুভেচ্ছা জানাতে না গিয়ে দলের এক প্রভাবশালী নেতার বাসায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। যদিও সোমবার তারা গুলশান কার্যালয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

দলটির একটি সূত্র জানায়, সে বলয়টির আশীর্বাদপুষ্ট নেতারা নেতৃত্বে আসার পর থেকেই শঙ্কায় রয়েছেন প্রয়াত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীরা। ঢাকা মহানগর বিএনপির আধিপত্য নিয়ে প্রয়াত খোকা এবং দলের আরেক শীর্ষনেতার বিরোধ তিনদশকের।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ঢাকা টাইমসকে বলেন, “ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতৃত্বে যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের অধীনে আমার মহানগর রাজনীতি করার সুযোগ নেই। আমি বিশ্বাস করি, তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিবেন।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আমি যখন থানা বিএনপির সভাপতি ছিলাম তখন মজনু ছাত্রদলের থানার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন মজনু মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি। এখন তার অধীনে কিভাবে রাজনীতি করি?”

তিনি বলেন, “তারপরও মজনুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ বিবেচনায় তাকে মেনে নিলেও যাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে সে তো বাচ্চা ছেলে। তার বাবার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। এখন তার ছেলেকে নেতা মেনে মহানগর রাজনীতি করা কঠিন।”

কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ঢাকা টাইমসকে বলেন, “নবীন-প্রবীণের সমন্বয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। আমি এর আগেও সালাম ভাইয়ের সঙ্গে সদস্য সচিব ছিলাম। সে কমিটিতেও কোনো সমস্যা হয়নি। যারা প্রবীণ তাদেরকেও গার্জিয়ান হিসেবে কমিটিতে রাখা হবে। তবে যাদের রাজপথে তেমন কোনো সক্রিয় ভূমিকা নেই, তাদের বিষয়ে আমরা নতুন করে ভাবব। আর কেউ যদি স্বেচ্ছায় মহানগর বিএনপিতে থাকতে না চায় সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার নেই।”

ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি নিয়েও কিছুটা সমন্বয়হীনতার অভিযোগ এলেও নেতৃত্ব নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তারেক রহমান অনেক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলে দলটির নেতারা বলছেন। তারা বলেন, যাকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি বিএনপিতে পরীক্ষিত। আর যাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে তিনিও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন এবং মৃত্যুঞ্জয়ী নেতা।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব ঢাকা টাইমসকে বলেন, “বিএনপি একটি বড় সংগঠন। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যাব। যারা ২০ পাওয়ার যোগ্য তাদের ১৮ হলেও দিবো। কাউকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো না। দল হবে শহীদ জিয়ার আদর্শ নিয়ে। আমাদের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং জনগণের হারানো বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা।”

এদিকে যুবদলের কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় সরগরম রেখেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। যুবদলের ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিট কমিটি নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে করছেন আনন্দ মিছিল।

যুবদলের নতুন কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না এর আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর নতুন সাধারণ সম্পাদক নয়ন ছিলেন ওই কমিটির সহসভাপতি। আগের কমিটি বিলুপ্ত করার পর থেকেই এই দুজন মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে আলোচনা চলছিল।

নতুন সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সোহেল-পিন্টু কমিটির সদস্য হিসেবে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া অন্য নেতাদের মধ্যে রেজাউল করিম পল যুবদলের গত কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহসভাপতি এবং ছাত্রদলের টুকু-আলিম কমিটির সহসভাপতি ও ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তার রয়েছে নিজস্ব কর্মী বলয়। নিজ এলাকায়ও রয়েছে শক্ত ভিত। কামরুজ্জামান জুয়েল ছিলেন যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজপথে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো। বিল্লাল হোসেন তারেক ছিলেন যুবদলের গত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবং নূরুল ইসলাম সোহেল ছিলেন যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক।

যুবদলের নতুন কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ঢাকা টাইমসকে বলেন, “তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান যুবদলসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গঠনে শ্রম ও রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের মূল্যায়ন করেছেন। আমরা সবাইকে নিয়েই এগিয়ে চলব।”

তিনি বলেন, “যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন করেছেন আমরা যেন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি তার জন্য আপনাদের (গণমাধ্যম) সহযোগিতা কামনা করছি।”

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/জেবি/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন 
ক্রান্তিকালে দেশ, আয় কমছে শ্রমজীবী মানুষের: রিজভী
পিপিএম পদক পেলেন এসপি কুদরত-ই-খুদা
বিভেদের রাজনীতি আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করেছে: মির্জা ফখরুল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা