খুলনার নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত, ২০ গ্রামের মানুষের উচ্ছ্বাস

দীর্ঘ ৩ দশকের প্রতীক্ষা শেষে খুলনার পাইকগাছার বহুল আলোচিত নাছিরপুর খাল উদ্ধার ও উন্মুক্ত হলো। বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খালটি থেকে অবৈধ দখলদারদের সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে খালের দুই পাড়ের ২০ গ্রামের মানুষ আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে, সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। খালের ওপর তাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পেয়ে মাছ ধরার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইফতেখারুল ইসলাম শামীম, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একরামুল হোসেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে খালের সাত স্থানে বসানো অবৈধ নেট পাটা অপসারণ করা হয়। খালের দুই পাড়ে প্রায় ২০৫ বিঘা জায়গাজুড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয় ‘অবৈধ দখলমুক্ত খাল’ হিসেবে।
খালটি উন্মুক্ত করার ফলে খালকে অবলম্বন করে যাদের অন্ন সংস্থান, খাল ঘিরে যাদের জীবন-জীবিকা তাদের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। মিষ্টি বিতরণ চলছে গ্রামে-পাড়ায়-বাড়ি-বাজারে। খালের দুই পাড়ে প্রাণ ফিরে পাওয়ার উচ্ছ্বাস চলছে।
খাল উন্মুক্ত হওয়ার পর তালতলা, চিনেমলা, গোয়ালবাথান, প্রতাপকাঠি, খোলা, কাজীমুছা, রেজাকপুর, কাশিমনগর, কানাইডাঙ্গা, কপিলমুনি, হরিঢালী, সালুয়া, শ্রীরামপুর, হাউলি, নাছিরপুর, রামনগর, মাহমুদকাঠির মানুষের মাঝে বুধবার ছিল অন্যরকম দিন।গত ৩০ জুন খুলনা জেলার ভূমি মন্ত্রণালয়ে জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটির সর্বশেষ সভায় পাইকগাছার নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছিল।
নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন পাইকগাছা-কয়রা এলাকার জনহিতৈষী, এলাকা উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে সংশপ্তক প্রতিজ্ঞ সুপরিচিত সাংবাদিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন।
বহুকাল ধরে খাল সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকার লাখ লাখ সাধারণ জেলে, কৃষক, ঘেরচাষি এবং সর্বসাধারণ অবরুদ্ধ ও অসহায় জীবনযাপন করে আসছিল। রাজনৈতিক দলীয় পরিচয়ে কতিপয় খালদস্যু দখলদার ভীতি ছড়িয়ে প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। এসব জলমহাল থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ যেমন ফসলের জন্য পানি দিতে পারে না, তেমনি প্রয়োজনীয় কাজেও এ পানি ব্যবহার করতে পারত না। যারা খালের পাশে মাছের ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের ঘেরের সর্বনাশ করে আসছিল এই খালদস্যুরা। খালদস্যূদের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বহু এলাকাবাসী। তারা স্থানে স্থানে বাঁশের পাটা, ঘন জালের বেষ্টনী নেটপাটা দিয়ে পানি প্রবাহ জব্দ করে খালটি প্রায় ভরাট করে ফেলেছে।
এ বিষয়ে অতীতে অসংখ্য বার মিছিল সমাবেশ মানব বন্ধন, প্রেস কনফারেন্স করেও মেলেনি সমাধান।
অবশেষে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খাল উদ্ধার ও উন্মুক্ত করার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার পর খাল পাড়ের সাধারণ জেলে, কৃষক এবং সাধারণ মানুষ তাঁকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করে আনন্দ মিছিল করেছেন। মিষ্টি বিতরণ করেছেন।স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ডাবলু দীর্ঘ দিন ধরে কখনো ইজারা নিয়ে আবার কখনো ইজারাবিহীন অবৈধ দখলে রেখে খন্ড খন্ড করে নেটপাটা দিয়ে লবণ পানির চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছিলেন দখলদাররা। আওয়ামী লীগ শাসন আমলের শেষ দিকে দখল লুটপাটে ব্যস্ত ছিল আওয়ামী লীগের লোকজন। বঞ্চিত করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
(ঢাকা টাইমস/০২জুলাই/জেবি/এসএ)

মন্তব্য করুন