হাসান মেহেদীসহ তিন সাংবাদিকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে বিচার দাবি সিপিজের
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদীসহ তিন সাংবাদিকের মৃত্যু ও হামলার ঘটনা তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট— সিপিজে।
২৬ জুলাই প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠনটি এই দাবি জানায়।
বিবৃতিতে সিপিজে বলেছে, ‘বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিক হাসান মেহেদী, মো. শাকিল হোসেন এবং আবু তাহের মো. তুরাবকে হত্যার ঘটনায় সিপিজে গভীরভাবে ব্যথিত।’
হাসান মেহেদীসহ সাংবাদিকদের মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সিপিজে এশিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর বেহ লিহ ইয়ি বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই সাংবাদিকদের ওপর সমস্ত হামলার জন্য দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে চালু করতে হবে।’
সিপিজে বলছে, গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহের সময় ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
একই দিনে গাজীপুর শহরে রিপোর্ট করার সময় নিহত হন দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার প্রতিবেদক শাকিল হোসেন।
পরদিন ১৯ জুলাই সিলেট শহরে একটি মিছিলে গুলিতে নিহত হন দৈনিক জালালাবাদ এবং দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রতিবেদক। এসময় তিনি একটি প্রেস ভেস্ট পরেছিলেন, তা সত্ত্বেও তার গায়ে গুলি লাগে।
এদিকে ১৮ জুলাই ঢাকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয়, বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায়ও নিন্দা জানিয়েছে সিপিজে।
সিপিজে বলছে, তারা এখন পর্যন্ত ১৪ সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এই ১৪ জনের মধ্যে অনেকে মাথায় ক্ষতসহ বিভিন্ন আঘাতের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়া পুলিশ, বিক্ষোভকারী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সমর্থকদের দ্বারা আরও ডজন খানেক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে সিপিজে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল প্লাজার ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী।
সেখানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক দৈনিক বাংলাদেশের আলোর স্টাফ রিপোর্টার ইমাম হোসেন ইমন জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রায় ১০ মিনিট সড়কে পড়ে থাকার পর হাসান মেহেদীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
ইমাম হোসেন ইমন জানান, ওইদিন অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে থেকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই সংবাদ সংগ্রহ করেন হাসান মেহেদী। বিকালে পুলিশের একটি এপিসি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়া হচ্ছিল। এসময় হাসান মেহেদী গুলিবিদ্ধ হন। তার মুখ, গলা ও বুকে শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা যায়।
এদিকে গত শুক্রবার সকালে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে হাসান মেহেদীর মরদেহ আনা হয় রাজধানীর রমনার ইস্কাটন গার্ডেনের ঢাকা টাইমস অফিস প্রাঙ্গণে। এসময় সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানেই তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় তিনি কেরাণীগঞ্জ এলাকায় পরিবারসহ থাকতেন। তার সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যা শিশু রয়েছে।
হাসান মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে। গত ২০ জুলাই দুপুরে সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/এমআর)